মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ জানুয়ারি: ছোটো থেকেই ‘নেশা’ ছিল সাইকেল। সেই নেশাই তাঁকে পরিণত করেছে বিস্ময় সাইক্লিস্টে। ব্রেক, প্যাডেল, চেন, সিট কিছুই নেই তাঁর সাইকেলে! আছে শুধু দুটো চাকা, হ্যান্ডেল আর সাইকেলের লোহার কাঠামোটুকু। আর অবশ্যই আছে তাঁর প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি! আর, তাতে ভর করেই ১৯৯৪ আর ২০১৮ সালে সারা দেশ পরিভ্রমণ করেছেন। কিন্তু, সামান্য কিছু আইনি জটিলতার কারণে অধরা থেকে গিয়েছিল ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ (Guinness World Records)। তবে, লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবংয়ের বাসিন্দা দেবেন্দ্রনাথ বেরা। এবার, আর আইনের ফাঁকফোকর থাকতে দেননি সবংয়ের পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজকর্মীরা। পূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী ডেবরা ও পিংলা ব্লকের পুলিশ প্রশাসনও। সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে, রবিবার ডেবরা ব্লকের বালিচক নেতাজী সংঘ থেকে যাত্রা শুরু করে, তা শেষ করলেন সবংয়ের দশগ্রাম বাসস্ট্যান্ড দুর্গামন্দির প্রাঙ্গণে। যাত্রাপথের মোট দৈর্ঘ্য ৩৩.৫ কিলোমিটার। ‘অদ্ভুত’ এই সাইকেল নিয়ে যাত্রা পথ অতিক্রম করতে দেবেন্দ্রনাথের সময় লাগলো মাত্র ৩ ঘন্টা ৩ মিনিট (তিন ঘণ্টা তিন মিনিট)। এবার যে তাঁর ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ হাতের মুঠোয় আসা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা তা মানছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। যাত্রাপথের শেষে সবং থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক সুব্রত সাহা নিজের হাতে ওআরএসএল খাইয়ে দিলেন দেবেন-কে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বছর ৫০ এর দেবেনের জন্মস্থান সবংয়ের নওগাঁ ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়সাহড়া গ্রাম। তবে, অকৃতদার দেবেন স্থায়ীভাবে বসবাস করেন পার্শ্ববর্তী সারতা ৫ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতসাই গ্রামে, নিজের মামাবাড়িতে। ছোটো থেকেই সাইকেল নিয়ে নানা কারিকুরি করা বা খেলা দেখানো তাঁর শখ ছিল। পরবর্তী সময়ে, এই শখ বা নেশাকেই নিজের পেশা করে নিলেন। সাইকেল খেলা দেখিয়ে, বুকের উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে, চুল দিয়ে বেঁধে ট্রাক ট্রেনে প্রভৃতি করেই রুজি রোজগার হয়। তবে, এর মাঝেই রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে দু’দুবার দেশ ভ্রমণ করেছেন অদ্ভুত এই সাইকেল নিয়ে। তবে, অন্যান্য নানা পুরস্কার ও সম্মান জুটলেও, অধরা থেকে গিয়েছিল’গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’। সেই লক্ষ্যেই, রবিবার সকাল ঠিক ১০ টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করেন দেবেন্দ্রনাথ। ছিলেন, সবং, পিংলা ও ডেবরা’র তিন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক ছাড়াও ডেবরার এসডিপিও গোবিন্দ শিকদার, সিআই কৃষ্ণেন্দু হোতা, পিংলার বিডিও বিশ্বরঞ্জন চক্রবর্তী। এছাড়াও, ছিলেন এই তিন ব্লকের স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের আধিকারিক ও সমাজকর্মীরা। ছিলেন স্থানীয় রাতুলিয়ার বিখ্যাত জাগলার এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হোল্ডার মনোজ মিশ্র। সর্বোপরি, সবুজ পতাকা নাড়িয়ে যাত্রাপথের সূচনা করে দেন ডেবরার বিধায়ক তথা রাজ্যের কারিগরী শিক্ষা ও উন্নয়ন মন্ত্রী হুমায়ূন কবীর। যাত্রাপথে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কোভিড বিধি মেনেই ছিলেন হাজার হাজার অনুরাগী। কড়া পুলিশি প্রহরা আর সহায়তায় ঠিক ১ টা ৪৮ মিনিটে যাত্রা শেষ করেন দেবেন্দ্রনাথ বেরা। এই পুরো বিষয়টিতে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া শিক্ষক ও সমাজকর্মী শান্তনু অধিকারী বলেন, “কিছু আইনগত বিষয়ে ত্রুটি থেকে যাওয়ার জন্য আগের দু’বার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হয়নি। এবার, গিনেস কর্তৃপক্ষ যে যে বিষয়গুলি উল্লেখ করে দিয়েছিলেন তার সবকটিই পূরণ করা হয়েছে। এমনিতেই, এই বিভাগে গিনেসের তালিকায় আগে কোনো রেকর্ড নেই। তাই, দেবেন দা-ই এই বিভাগের প্রথম রেকর্ড হোল্ডার হবেন। আমরা আশায় আছি, এই স্বীকৃতি এবার আসবেই!”