দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পূর্ব মেদিনীপুর, ১৭ জানুয়ারি: “একচুয়ালি দাম অনেক বেশি। তবে যারা গরীব তাদের জন্য একটু কম দাম। ১৫ হাজার টাকা মাত্র! আপনার বাড়ির ছেলেকে যদি আপনি ভালোবাসেন, তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে পারবেন না!” আপাতভাবে সহজ সরল এই স্বীকারোক্তি মনে হলেও, আদতে বেশ বড়সড় বুজরুকির ফাঁদ পেতে বসেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ‘মাদুলিবাবা’! হলদিয়ার সুতাহাটার সৈয়দ আবদুল কাদের নামে ওই ৭৭ বছর বয়সী ‘মাদুলিবাবা’ বেশ ভালোই ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন। তাঁর দাবি, “অনেকের কাজ হয়েছে। বাড়িতে ঝুলিয়ে রাখলে বা গলায় পরলেই চলে যাবে করোনা ভাইরাস!” গ্রামের দরিদ্র, মুখ্য সুখ্যু মানুষগুলোকে এভাবেই বুঝিয়ে-সুজিয়ে চলছিল ব্যবসা। সোমবার সকালে এক সর্বভারতীয় চ্যানেলে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই আলোড়ন পড়ে যায়! গ্রামে পৌঁছয় ডাক্তার, স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন এবং বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পারেন ‘মাদুলিবাবা’। তাই, কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই ‘মাদুলি’ ফেলে পগারপার হয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে গ্রামে, বিজ্ঞান মঞ্চ ও পঞ্চায়েত সমিতির তরফে এই বুজরুকির বিরুদ্ধে জোর প্রচার চালানো হচ্ছে।

thebengalpost.net
মাদুলিবাবা ও তাঁর মাদুলি :

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে অব্যর্থ দাওয়াই ‘মাদুলি’, এই বিজ্ঞাপনী প্রচারকে সামনে রেখেই মাদুলি বিক্রি চলছিল হলদিয়ার সুতাহাটার গ্রামে গ্রামে। ‘গলায় মাদুলি ঝোলান আর করোনা ভালো করুন’ এটাই স্লোগান। আর এই স্লোগান রীতিমতো সাইন বোর্ডে লিখে, রীতিমতো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন সুতাহাটার সৈয়দ আবদুল কাদের। তিনি নিজে মুখেই দাবি করছিলেন, লোকজন আসছেন এবং তাঁর বাড়ি থেকে মাদুলি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দাম মাত্র ১৫ হাজার। তবে, দরিদ্র মানুষদের জন্য আছে কনসেশন ব্যবস্থা! আদৌ কি সম্ভব? কি চলছে গ্রামে? নড়েচড়ে বসে বিজ্ঞান মঞ্চ থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির লোকজন। চিকিৎসকদের বক্তব্য, “পুরোপুরি বুজরুকি! মাদুলি বাড়িতে ভাইরাস আনতে পারে, তবে বিদায় করতে পারে না!” একই বক্তব্য হলদিয়া বিজ্ঞান মঞ্চের। তাঁরা গ্রামজুড়ে প্রচার শুরু করেছেন। আর, সোমবার দুপুর নাগাদ গ্রামে পৌঁছে যায়, পুলিশের লোকজনও। ততক্ষণে অবশ্য, ‘মাদুলি’র ভরসা না করে, গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছেন মেদিনীপুরের বিখ্যাত এই ‘মাদুলিবাবা’!