তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ জুলাই:কুড়ি-একুশ করোনা কেড়ে নিয়েছিল। ফের বাইশে ধর্মতলার পথে দিদির সৈনিকরা। ধর্মতলার শহিদ দিবস মানেই তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এক অন্য আবেগ-উৎসাহ। সেদিনের (১৯৯৩ এর ২১ জুলাই) যুবনেত্রী মমতা’র নেতৃত্বেই হয়েছিল মহাকরণ অভিযান। সেই মমতা’ই আজ তৃণমূলের দলনেত্রী, তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাই, এগারো (২০১১)’র পর থেকে তাঁর সৈনিকদের মধ্যে ‘একুশে জুলাই’ নিয়ে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা আরো বেড়েছে। ‘ডিম্ভাত’ আর ‘চকচকে সেলিব্রেটি মুখ’-দেখার মতো কিছু বিষয়-ও অবশ্য যুক্ত হয়েছে। শহিদ সমাবেশ হলেও তাই সভা ঘিরে শোকের থেকেও কর্মীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় আনন্দ-উদ্বেলতা! অবশ্য এনিয়ে তৃণমূলের মত, “একুশ মানে আমাদের কাছে নতুন শপথ গ্রহণের দিন। দিদির বার্তা বুকে করে নিয়ে এসে, নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ার আবেগ কাজ করে। তাই, কর্মীদের মধ্যে শোক থাকলেও তাকে ছাপিয়ে যায় উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনা।” আর, দু’বছর পর এই বাইশের ২১ জুলাই-কে কেন্দ্র করে তো নজিরবিহীন তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে। আসলে শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বার্তা দিয়েছে, এবারের একুশে জুলাই থেকে শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচনের বার্তা নয়, দিদিকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ নির্বাচনের শপথ গ্রহণ করতে হবে! দিল্লি চলো’র শপথ গ্রহণ করতেই তাই ধর্মতলায় সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপানোর জেদ দেখা গেছে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বুথ কর্মীদের মধ্যে। তাছাড়াও, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূল কর্মীদের জয়োচ্ছ্বাসের আবেগ বুকে বাঁধা ছিল করোনা’র দাপটে। সেই আবেগ তাই এবার ‘বাঁধনহারা’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকেই এক হাজারের বেশি বাস আর কয়েক হাজার ছোট গাড়ি রওনা দিয়েছে ধর্মতলার উদ্দেশ্যে। জানিয়েছেন খোদ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অজিত মাইতি। দুই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা এবং আশিস হুদাইত জানিয়ে দিয়েছেন, ৫০ হাজার করে, ১ লক্ষ সমর্থক ইতিমধ্যে ধর্মতলার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে!

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অজিত মাইতি বুধবার দাবি করেছিলেন, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার ৭ টি বিধানসভা এলাকা থেকে ৩২৭ টি বাস, ৮০ টি ট্রেকার এবং ১৫০ টি মারুতিতে করে মোট ৫১ হাজার কর্মী সমর্থক রওনা দিচ্ছেন ধর্মতলার উদ্দেশ্যে। একই দাবি করেছিলেন তৃণমূলের ঘাটাল সংগঠনিক জেলার সভাপতি আশীষ হুদাইত। অন্যদিকে, শুধু পাঁচ শতাধিক বাস নয় কয়েকশো ছোট গাড়ি ছাড়াও একের পর এক ট্রেনে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা থেকে ৫০ হাজারের বেশি কর্মী সমর্থক ধর্মতলার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছেন বলে বুধবার রাতে জানিয়েছিলেন মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। তিনি সহ পুরো জেলা নেতৃত্ব ও যুব নেতৃত্বকে লক্ষ্য করা গেছে স্টেশনে স্টেশনে তদারকি করতে। শালবনি, গড়বেতা থেকে মেদিনীপুর, খড়্গপুর সর্বত্র খোলা হয়েছিল ক্যাম্প। আর, এসবের ফলে ২০ জুলাই দুপুরের পর থেকেই রাস্তা থেকে উধাও হয়ে গেছে বাস! যে’কটা চলছিল তাতেও নাকি তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। আর, ২১ জুলাইয়ের সকাল থেকে মেদিনীপুর – খড়্গপুর সহ গ্রামগঞ্জের পথঘাটও প্রায় যানবাহন হীন হয়ে পড়েছে। ভরসা শুধু ট্রেন আর অটো-টোটোর ছোটো গাড়ি। ফলে, দিদির সৈনিকরা আবেগ নিয়ে ধর্মতলায় পাড়ি দিলেও, নাজেহাল হতে হচ্ছে নিত্যযাত্রী ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী থেকে বিভিন্ন কাজে বাধ্য হয়ে রাস্তায় বেরোনো সাধারণ মানুষকে!