দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ আগস্ট: দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর, ঋষি রাজনারায়ণ বসু’র স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক ‘প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার’ রক্ষণাবেক্ষণের অনুমতি পেয়েছে মেদিনীপুর কলেজ। এই দাবি করে, মঙ্গলবার সেই কোয়ার্টার বা আবাসনে ঢুকতে গিয়ে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের বেনজির বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল কলেজ কর্তৃপক্ষকে। বিক্ষোভ-অবরোধে এই মুহূর্তে প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে পঞ্চুরচক-গোলকুয়াচকের মাঝামাঝি কলেজ কলেজিয়েট রোড। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকে কলেজ কলেজিয়েট- এর দ্বন্দ্বে তালা পড়েছিল বিপ্লবী রাজনারায়ণ বসু’র স্মৃতিধন্য এই বাড়িটিতে। প্রায় জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায় দশায় পড়েছিল এই আবাসন বা কোয়ার্টার-টি। জেলা প্রশাসন অনেকবার দু’পক্ষকে নিয়ে বসে মেটানোর চেষ্টা করলেও, ‘সম্পত্তি’র দখলদারি ছাড়তে রাজি হয়নি কোনো পক্ষই। মঙ্গলবার সকালে মেদিনীপুর কলেজের তরফে জানানো হয়, সোমবার মেদিনীপুর জেলা আদালতের পক্ষ থেকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ এসে পৌঁছেছে তাঁদের হাতে। সেখানে উভয়পক্ষকে স্টেটাস-কো মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘হেরিটেজ’ এই ভবনের ভগ্নপ্রায় দশা। তা অবিলম্বে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল যেহেতু এই মামলার পার্টি নয়, তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে পারে, ২০১৩ সালের স্টেটাস-কো অনুযায়ী। এই স্টেটাস-কো মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দু’পক্ষকেই। কিন্তু, মঙ্গলবার ওই ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে গিয়ে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল কর্তৃপক্ষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। কলেজ ও কলেজিয়েটের সমস্ত পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা রাস্তায় নেমে এসেছেন। পৌঁছেছেন পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা।

thebengalpost.net
এই আবাসনেই চেটানো হল কোর্ট অর্ডার :

thebengalpost.net
২০১৪ সালের ছবি :

উল্লেখ্য যে, মেদিনীপুর কলেজ এবং কলেজিয়েট স্কুল (বালক) পাশাপাশি রয়েছে। কলেজের একপাশে রয়েছে স্কুল। স্কুলের পাশেই রয়েছে এই ঐতিহাসিক আবাসন বা বাড়িটি। কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৩৪ সালে। মেদিনীপুর কলেজের প্রতিষ্ঠা ১৮৭৩ সালে। ১৮৫১ থেকে ১৮৬৬-টানা ১৬ বছর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) প্রধান শিক্ষক ছিলেন ঋষি রাজনারায়ণ বসু। যে বাড়িটি নিয়ে চাপানউতোর, সেই বাড়িতেই থাকতেন তিনি। রাজনারায়ণ বসু ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা নব জাগরণের অন্যতম পথ-প্রদর্শক এবং শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ইচ্ছে ছিল, ভারতের নব জাগরণের অন্যতম এই পথ-প্রদর্শকই যেন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। বিদ্যাসাগরের ইচ্ছের মর্যাদা দেন ঋষি রাজনারায়ণ বসু। ১৮৮৯৯ সালে প্রয়াত হন তিনি। এদিকে, ১৯৫৭ সাল থেকে বাড়িটি মেদিনীপুর কলেজ অধ্যক্ষের আবাসন বা ‘প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এটি যখন তালা পড়ে (২০১৩ সালে), তখনও ‘প্রিন্সিপ্যাল কোয়ার্টার’ হিসেবেই নামাঙ্কিত ছিল। কিন্তু, একটি মামলার কারণে তাতে তালা দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন জেলা প্রশাসন। এরপর থেকেই, মামলার গেরো এবং দ্বন্দ্ব-জটিলতায় ঐতিহাসিক এই আবাসন জরাজীর্ণ ও ভগ্ন প্রায় অবস্থায় পড়েছিল!

thebengalpost.net
অবরোধ মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রদের :

আর, তা রক্ষণাবেক্ষণ করার অনুমতি প্রার্থনা করে সম্প্রতি মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ জেলা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, মেদিনীপুর কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুল-কে ২০১৩ সালের স্টেটাস-কো মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ, সেই সময় যে পরিস্থিতিতে ছিল, মামলার ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তার কোনো পরিবর্তন হবেনা! আপাততো তাই, মেদিনীপুর কলেজ-কে এই আবাসন রক্ষণাবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়। এমনটাই দাবি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেই হিসেবেই এদিন সকাল এগারোটা নাগাদ ওই বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে যান কলেজের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। কিন্তু, তারপর থেকেই শুরু হয় বিক্ষোভ-অবরোধ। এদিকে, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, “ঋষি রাজনারায়ণ বসু’র বাড়ি এটি। তিনি ১৮৫১-‘৬৬ সাল পর্যন্ত এখানেই থাকতেন। তখন মেদিনীপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত-ই হয়নি। পরে ওঁদের অধ্যক্ষকে এখানে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে ‘প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার’ নাম হয়ে গিয়েছিল। পরে আমরা আদালতে যাই। মামলা এখনও বিচারাধীন। এখন তাই স্টেটাস কো মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দু’পক্ষকে। কিন্তু, ওরা তা দখল করতে চাইছেন। তাই আমাদের প্রতিবাদ।” শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উঠে যায় অবরোধ। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেদিনীপুর পৌরসভার পৌরপ্রধান সৌমেন খান।

thebengalpost.net
পথে মেদিনীপুর কলেজের পড়ুয়ারাও :

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন: