স্বর্ণদীপ বাগ, ঝাড়গ্রাম, ১৬ জানুয়ারি: ভুল বুঝিয়ে, জালিয়াতি করে কিংবা জোর করে আদিবাসীদের জমি দখল থেকে শুরু করে, ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার মারাত্মক অভিযোগ স্থানীয় স্পঞ্জ আয়রন কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে স্থানীয় বিধায়কের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন প্রতারিত এলাকাবাসী। বিধায়কের তরফে পদক্ষেপ শুরু হতেই, রাতের অন্ধকারে ভাড়া করা গুন্ডা দিয়ে তাঁর উপর হামলার অভিযোগ উঠল স্থানীয় ওই ইস পয়েন্ট আয়রন কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর এলাকার। গতকাল অর্থাৎ রবিবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে কুলটিকরি এলাকায় নিজের কাজ সেরে ফেরার পথে লোধাশুলি ব্রিজের কাছে তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। দুটি বাইকে করে ৫-৬ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী এসে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তবে, ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে ৪ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার তাদের ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হলে, বিচারক ৩ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।
প্রসঙ্গত, গোপীবল্লভপুর বিধানসভা এলাকায় একটি ‘বেআইনি’ স্পঞ্জ আয়রন কারখানা দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার আদিবাসী লোকজনদের জমি, বনদপ্তরের জমি জোর করে দখল করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সেই সমস্ত জমির একাধিক নকল দলিল তৈরি করে তা দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বন্ধক (Mortgage) দিয়ে সেই টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ করছিলেন গ্রামবাসীরাই। সম্প্রতি তাঁরা তাদের অভিযোগ স্থানীয় বিধায়ক ডাঃ খগেন্দ্রনাথ মাহাতোকে জানান। এমনকি ঝাড়গ্রাম আদালতেও গ্রামবাসীরা এই কারখানার বিরুদ্ধে একাধিক বেআইনি জমি কারবারের অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এদিকে, অভিযোগ পেয়েই বিধায়ক ডাঃ খগেন্দ্রনাথ মাহাত গোটা বিষয়টির সঠিক তদন্তের জন্য তৎপরতা শুরু করেন। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আবেদনও জানান। তাঁর তৎপরতাতেই বে-আইনি জমি কারবার কিছুটা থমকে যায়। আর, সেই আক্রোশেই তাঁর উপর কারখানা কর্তৃপক্ষ ভাড়া করা গুন্ডা দিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। কারখানা কর্তৃপক্ষ পাটোয়ারীদের বিরুদ্ধে তিনি থানাতেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিধায়কের আপ্ত সহায়ক সৌরজিৎ ভট্টাচার্য থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ, বালিবাসা টোল প্লাজা থেকেই দু’টি বাইকে করে ৫-৬ জন দুষ্কৃতী বিধায়কের গাড়িটিকে অনুসরণ করছিল। তারপর, লোধাশুলি ব্রিজের কাছে, বিধায়কের গাড়িটিকে ঘিরে ধরে ওই দুষ্কৃতীরা। গাড়ি থেকে বিধায়কের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও আপ্তসহায়ক নামলে, তাঁদের উপর সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। একইসঙ্গে, বিধায়ক যাতে জমি দখল ও ব্যঞ্জালিয়াতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন, সেই হুশিয়ারিও দেওয়া হয় বলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বিধায়কের আপ্তসহায়কের তরফে। অভিযোগ পাওয়ার পর রবিবার গভীর রাতেই পুলিশ ৪ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে রঞ্জিত চালক নামে এক দুষ্কৃতীর বাড়ি খড়্গপুরে বলে জানা গেছে। বাকি ৩ জন (সুব্রত চালক, পিন্টু মাহাত প্রমুখ) লোধাশুলি এলাকারই বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ৪ জনেরই বয়স ১৮-২২ এর মধ্যে। তাদের বিরুদ্ধে নানা দুষ্কৃতী মূলক কাণ্ডকারখানার অভিযোগ রয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। পাটোয়ারী’রা তাদের টাকার বিনিময়ে বিধায়কের উপর হামলার ‘বরাত’ দিয়েছিল বলে অভিযোগ! ইতিমধ্যে ওই ৪ দুষ্কৃতীকে নিজেদের হেফাজত নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনার দ্রুত রহস্যোদ্ধার হবে বলে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সূত্রে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ মাহাত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, “যেভাবে এলাকার দরিদ্র ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে বঞ্চনা ও প্রতারণা করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করা হচ্ছিল, তার বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। সেজন্যই এই হামলা। তবে চিন্তা করবেন না, পাটোয়ারীরা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারবে না! প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছে।”