দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ জানুয়ারি: “দুঃখের সমুদ্রে ডুব দিয়েও সুখের মুক্তো খুঁজে আনার মতোই আমরা আশাবাদী, মানবিক সরকারের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ৭ জন পিজিটি-র সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন এবং তা প্রত্যাহার করে নেবেন। তাই আমরা আগামীকাল থেকেই আমাদের আংশিক কর্মবিরতি তুলে নিয়ে, রোগীদের পরিষেবায় সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত থাকব। যাতে কোনোভাবেই রোগী পরিষেবা ব্যাহত না হয়। সেই সঙ্গে আমরা এই মুহূর্ত থেকেই অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নিলাম।” মঙ্গলবার রাত্রি ৮টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করে ঠিক এমনটাই জানালেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ‘মাতৃমা’ বিভাগে প্রসূতি মৃত্যু কান্ডে, বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ৬ জন জুনিয়র চিকিৎসক সহ ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে CID তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) প্রসূতি বিভাগের আরও এক জুনিয়র চিকিৎসকের কাছে এসে পৌঁছয় সাসপেনশন লেটার। এই ঘটনার প্রতিবাদেই শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ৮ থেকে আংশিক কর্মবিরতি পালন করছিলেন মেদনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত থেকে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিলেন তাঁরা। যদিও, এই ক’দিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী পরিষেবা ব্যাহত হয়নি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই শুক্রবার আংশিক কর্মবিরতি সহ বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে। শনিবার তাঁরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল মৌসুমী নন্দী, নবনিযুক্ত সুপার ইন্দ্রনীল সেন ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী-কে ঘেরাও করেন এবং তাঁদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। প্রিন্সিপালের তরফে চিঠি পাঠানো হয় রাজ্যের শিক্ষা স্বাস্থ্য অধিকর্তা (DME) এবং এডিজি সিআইডি-র কাছে। জুনিয়র চিকিৎসকরাও DME, DHS এবং NMC (ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল)-কে চিঠি দেন। এর মধ্যেই জুনিয়র চিকিৎসকদের স্বপক্ষে বার্তা দেওয়া হয়, আইএমএ-র প্রতিনিধিদল এবং গ্রিভান্স রিড্রাশাল কমিশনের সদস্যদের তরফে। সকলেই জানান, “সিনিয়রের (RMO) তত্ত্বাবধানে জুনিয়র চিকিৎসকেরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র। ময়নাতদন্তের রিপোর্টও অস্ত্রোপচারে খুঁত বা ভুল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, শোকজ না করে কিভাবে সাসপেন্ড করা হয়?” প্রিন্সিপাল মৌসুমী নন্দীও জানিয়েছিলেন, “ওঁরা শিক্ষানবিশ চিকিৎসক। আশা করি ওঁদের বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা হবে। আমি DME এবং DHS চিঠি দিয়েছি।”
অন্যদিকে, সাসপেন্ডেড ৭ জুনিয়র চিকিৎসক ব্যক্তিগতভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন সাসপেনশন প্রত্যাহারের জন্য। শেষ পর্যন্ত সমস্ত মহল থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর অবশেষে জুনিয়র চিকিৎসকেরা তাঁদের অবস্থান-বিক্ষোভ এবং আংশিক কর্মবিরতি তুলে নিলেন মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাতে। এদিন তাঁরা বলেন, “আমরা আমাদের প্রিন্সিপাল ম্যাডাম, স্বাস্থ্য দপ্তর এবং আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসা চিকিৎসকদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি। আমরা গভীরভাবে আশাবাদী মানবিক সরকারের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী আমাদের এই বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করবেন। আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। ভালোভাবে রোগী পরিষেবাও দিতে পারব কিনা জানি না! তা সত্ত্বেও আমরা অবস্থান বিক্ষোভ ও আংশিক কর্মবিরতি তুলে নিচ্ছি।” মঙ্গলবার রাতে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী জানিয়েছেন, “ওঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। আমরাও আশাবাদী ভালো কিছুই হবে।”