তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ আগস্ট: সালিশি সভা বসিয়ে এক পরিবারকে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার নিদান দিল গ্রামের মাতব্বররা। মাতব্বরদের ভয়ে ঘরছাড়া পরিবার! ইতিমধ্যে, পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্তে শুরু করেছে পুলিশ। জানা যায়, একটি ঘটনার প্ররিপ্রেক্ষিতে রীতিমতো সালিশি সভা বসিয়ে গ্রামেরই এক পরিবারকে অভিযুক্ত করে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার নিদান দেন গ্রামের মাতব্বররা। টাকা আদায়ে জোর পূর্বক জমির দলিলের কপি নিয়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। মাতব্বরদের ভয়ে এই মুহূর্তে ঘর ছাড়া ওই পরিবার।
ঘটনার সূত্রপাত, গত ৩০ জুলাই রাত্রি সাড়ে ন’টার পর। ওইদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার চাকীরহাট এলাকায় কাশীনাথ চাকী’র শ্রীহরি ডেকোরেটর্সে আগুন লেগে যায়। ক্ষতি হয় অনেকটাই। ঘটনাস্থলে পুলিশ এলেও, কিভাবে আগুন লাগে তা বুঝতে পারেনি। মালিকও বুঝতে পারেননি আগুন লাগার প্রকৃত কারণ। তবে, সেদিনই মনে মনে এক ফাঁদ এঁটেছিলেন গোডাউনের মালিক কাশীনাথ চাকী! এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ৬ আগস্ট আগুন লেগে যাওয়া ডেকরেটরের মালিক কাশীনাথ চাকী গ্রামের কয়েকজন মাতব্বরদের নিয়ে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা অন্য এক ডেকরেটরের মালিক তারকনাথ আড়ি’কে নানান অজুহাত দেখিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পালপাড়ায় সুকুমার মাইতি নামে এক গনককারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে গনককার তারকনাথবাবু ও তাঁর ছেলে এই আগুন লাগানোর ঘটনায় যুক্ত বলে দাবি করেন সকলের সামনে। তারপরই, ক্ষতিপূরণের বিধান দিয়ে তারকনাথ বাবু’র পরিবারের উপর নানান চাপ তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
৬ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে তারকনাথ ও তাঁর দুই ছেলে এবং গৃহবধূ তথা ৯ মাসের শিশুর মা দিপালীর উপর প্রকাশ্যে জুলুম ও মারধোর করার অভিযোগ ওঠে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে। সান্ধ্যায় তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় একটি জায়গায়। সেখানে একাধিক মানুষের সামনে জোর করে আগুন লাগানোর কথা স্বীকার করানো হয় ও সাদা কাগজে সই করিয়ে, জমির দলিল কেড়ে নিয়ে ১ কোটি ১০ টাকা জরিমানার নিদান দেয় মাতব্বররা। আক্রান্ত পরিবার ওখান থেকেই পুলিশকে জানালে দাসপুর থানার পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। তা সত্ত্বেও ওই পরিবারকে মাতব্বরা হুঁশিয়ারি দেয়, পুলিশের কাছে মুখ না খুলতে। এমনকি তাঁদের ঘর বাড়ি সম্পত্তি জোর করে দখল নিয়ে টাকা আদায় করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। আক্রান্ত পরিবারের অভিযোগ, দাসপুর থানা এই ঘটনায় কোনও সহযোগিতা করেনি। শেষমেশ ৯ আগস্ট ওই পরিবার ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, বেশ কয়েকজন মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় এখনও কোনও আইনি পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। অপরদিকে, আড়ি পরিবার এখন প্রাণ রক্ষার তাগিদে ঘর ছাড়া! অন্যদিকে গ্রামের মোড়লরা সালিশি সাভার কথা স্বীকার করলেও, সেই সময় জোর করে সাদা কাগজে সই করানো এবং মারধরের কথা অস্বীকার করেছে। ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নীশ্বর চৌধুরী বলেন, দুই দিনের দু’টি ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। গ্রামবাসীদের জিঞ্জাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। আগুন লাগানো, সালিশি সভা ডাকা- প্রভৃতি ঘটনায় যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।