তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ ডিসেম্বর: সরকারিভাবে ধান ক্রয় নিয়ে এতদিন কৃষকদের অভিযোগ ছিল, একশ্রেণীর দালাল চক্রের পাল্লায় পড়ে প্রকৃত চাষীরা সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রয় করতে পারছেন না। রাজ্যজুড়ে এই অভিযোগ উঠছিল। এরপরই, দুর্নীতি বন্ধে সরকার সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রয়ের জন্য অনলাইন ব্যবস্থা করেছে। আর, তারপরই পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষকদের অভিযোগ, “অনলাইন ব্যবস্থায় চাষীদের হয়রানি আরো বেড়েছে।” জানা যায়, এই মরশুমে সরকার একজন কৃষকের কাছ থেকে সর্বাধিক ৪৫ কুইন্টাল ধান সরকারি সহায়ক মূল্যে কিনবে। চাষিদের বক্তব্য, প্রথমত রাত্রি বারোটা এক মিনিট থেকে অনলাইনে বুকিং শুরু হয় এবং মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই কোটা পূরণ হয়ে যায়। যার ফলে, দিনের পর দিন রাত জেগেও অনলাইনে বুকিং করা যায় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতিটি ব্লকের জন্য মাত্র ৫০ জন কৃষক এই সুযোগ পাবে। এদিকে, চন্দ্রকোনা ১ ব্লকে ধান বিক্রয় করার জন্য নথিভুক্ত চাষি প্রায় ৮ হাজার। সপ্তাহে সোম থেকে শনি ৬ দিন ধান কেনা হয়। মাসে যদি ২৪ দিন ধান কেনা হয়, সেই হিসাবে মাত্র ১২০০ চাষি সুযোগ পাবে। সেই হিসেবে ৮ হাজার চাষির জন্য ৬ মাসের উপর সময় লাগবে। বাস্তবে তাই, সরকারের ঘোষণা থাকলেও চাষিরা সর্বোচ্চ ১৫ কুইন্টাল এবং সর্বনিম্ন ৬ কুইন্টাল সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করার সুযোগ পাবে। সেই হিসাবে কোন চাষিকে ৪৫ কুইন্টাল ধান বিক্রয় করতে হলে ৩ বার বুকিং করতে হবে।

thebengalpost.net
সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রয়ে হয়রানি পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষকদের :

কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এই মরশুমে শুধুমাত্র চন্দ্রকোনা ১ ব্লকে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। গড় হিসাবে ফলন যদি ৫ মেট্রিক টন ধরা হয়, চন্দ্রকোনা ১ নং ব্লকের উৎপাদিত ধান ৮ লক্ষ টন। এই ব্লকে ৪৫,০০০ কৃষক সরকারি অনুদান পেয়ে থাকেন। এই বিপুল সংখ্যক কৃষক যদি ধান বিক্রয় করতে যায় তাহলে চিত্রটা কি দাঁড়াবে সহজেই অনুমেয়! অন্যদিকে চাষীদের অভিযোগ, এই বিপুল সংখ্যকের মধ্যে বেশ কিছু চাষিদের নথিপত্র জোগাড় করে একশ্রেণীর দালাল চক্র অফিসের সঙ্গে যোগসাজশ করে অনলাইনে এই সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে। চাষিদের দাবি, সরকারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী একবারেই এই সর্বোচ্চ ধান নেওয়া হোক। কারণ, ১৫ কুইন্টাল ধান আনতে তাদের প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে, বেশ কয়েকটি কর্মদিবসও নষ্ট হচ্ছে। আবার, সরকারি নিয়ম না মেনে কুইন্টাল প্রতি ৬ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত ‘বলন’ (ভুয়ো ধান) হিসাবে বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আখেরে দালাল চক্র পুরো সিস্টেমটাকে ঘিরে রেখেছে বলেই কৃষকদের অভিমত।

এ বিষয়ে সিপিএম নেতা বজেন্দ্র ঘোষ এর দাবি, “তৃণমূলী ফোড়েরাজ চলছে কিষাণ মান্ডিতে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে। সাধারণ কৃষককে ব্যবহার করে তৃণমূল লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে।” একই অভিযোগ বিজেপির মন্ডল সভাপতি সবুজ মজুমদারের। তিনি বলেন, “একটা কৃষককে ধান বিক্রি করতে এসে একাধিকবার ডেট বুকিং করতে হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।” সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে চন্দ্রকোনা ২ নং ব্লকের ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ধান কেনা হচ্ছে। যদি কোথাও কোন সমস্যা হয়ে থাকে সেই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” এদিকে, বিষয়টি নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ কণিকা মাণ্ডিও।

thebengalpost.net
আশ্বাস প্রশাসনের: