মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ আগস্ট: “মিছিলে দেখেছিলাম একটি মুখ/ মুষ্টিবদ্ধ একটি শানিত হাত/ আকাশের দিকে নিক্ষিপ্ত/ বিস্রস্ত কয়েকটি কেশাগ্র/ আগুনের শিখার মতো হাওয়ায় কম্পমান।” লিখেছিলেন ‘পদাতিক কবি’ সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তাঁর “পদাতিক” কাব্যগ্রন্থের ‘মিছিলের মুখ’ কবিতায়। শুক্রবার পড়ন্ত বিকেলে কবির সেই ‘মিছিলের মুখ’-কেই যেন খুঁজে পাওয়া গেল জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘শাল-মহুয়ার দেশ’ শালবনীর গোদাপিয়াশালে। আর জি কর কাণ্ডে এবার গর্জে উঠলো প্রত্যন্ত শালবনী ব্লকের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীরাও। নারীদের উপর জন্তু-জানোয়ারের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে বিদ্যালয় ছুটির পর একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয় শালবনী ব্লকের গোদাপিয়াশাল চারুবালা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের উদ্যোগে। ৬০নং জাতীয় সড়ক ধরে গোদাপিয়াশাল থেকে কাছারিরোড অবধি হাতে প্রতিবাদী পোস্টার, ফেস্টুন নিয়ে এবং কণ্ঠে দৃপ্ত স্লোগান উচ্চারণ করতে করতে এই মিছিলে সমান তালে পা মেলান শিক্ষিকা ও ছাত্রীরা।
মিছিল শেষে চারুবালা বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সায়নী দত্ত গর্জে ওঠে, “আমরা কি মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করে অপরাধ করেছি যে আমাদের ধর্ষিতা হতে হবে? আমাদের কি কন্যাশ্রী হওয়ার কোন অধিকার নেই? আমরা চাই, অবিলম্বে আর জি কর মেডিক্যালের ঘটনায় দোষী প্রত্যেককে সামনে আনা হোক এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আমরা বিশ্বাস করি, এই ঘটনার সঙ্গে কোন একজন জড়িত নয়, অনেকে জড়িত!” সায়নী এও বলে, “প্রত্যেক নারীর নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে এবং এই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কোন জন্তু-জানোয়ার আমাদের উপর আর হামলা করার সাহস না পায়!”
অন্যদিকে, এদিন প্রথমার্ধের ক্লাসের পর অর্থাৎ মিড-ডে মিল শুরু হওয়ার আগে মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষক তথা স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে একটি প্রতীকী-প্রতিবাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঐন্দ্রিলা, সুইটি, অর্পিতারা বিভিন্ন প্রতিবাদী কবিতা উচ্চারণের মধ্য দিয়ে আরজি কর মেডিক্যালের মহিলা চিকিৎসকের উপর নারকীয় অত্যাচার তথা খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদ জানায়। ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহস জুগিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকারাও। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডঃ প্রসূন কুমার পড়িয়া বলেন, “হঠাৎ করেই কয়েকজন ছাত্রী এসে বলে, স্যার যেভাবে আমরা বাল্যবিবাহ সহ সমাজের নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই; আমরা কি এই ঘটনারও প্রতিবাদ জানাতে পারি না? আমার পক্ষে আর ‘না’ বলা সম্ভব ছিল না!”