দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ আগস্ট: ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারির ‘কুখ্যাত’ গণহত্যা! লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিআইএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি থেকে গুলি চলার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯ জন‌ নিরীহ গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন অন্তত ২৬ জন। সেই ঘটনাতেই, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি, ১৪৮,১৪৯, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২ এবং অস্ত্র আইনের ২৫/২৭ ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল ফুল্লরা-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে। নেতাই গণহত্যা মামলার একমাত্র মহিলা আসামী ছিলেন ফুল্লরা মণ্ডল। ২০১৪ সালে (৩০ জুন) তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, প্রায় ১১১ জন গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে। দীর্ঘ ৮ বছর কারাবাসের পর গত ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট বছর ৬৫’র এই নেত্রীর জামিন মঞ্জুর করেন। আজ, শুক্রবার (২৬ আগস্ট), মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার (Midnapore Central Correctional Home) বা সেন্ট্রাল জেল থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ জেল থেকে বেরোতেই আবেগের বাঁধ ভাঙে সিপিআইএম নেতা-কর্মীদের। ফুলে-মালায়-চোখের জলে লড়াকু এই নেত্রীকে বরণ করে নেন আত্মীয় পরিজন ও পার্টি কর্মীরা।

thebengalpost.net
৮ বছর পর ফুল্লরা’র জেলমুক্তি :

একসময় অবিভক্ত মেদিনীপুরের সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন। ছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষও। লালগড় থানার নেতাই গ্রামেই বাড়ি ফুল্লরা’র। বিয়ে করেননি। নেতাইয়ের মণ্ডলপাড়ায় বাবার কাছেই থাকতেন। ২০১১ সাল থেকেই (সিপিআইএমের মতে ২০১০) তিনি ঘরছাড়া ছিলেন। ২০১৪ (৩০ জুন) সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় নেতাই মামলায়। যদিও, সিপিআইএম-এর পক্ষ থেকে এই ঘটনা-কে ‘ষড়যন্ত্র’ বলেই বারেবারে চিহ্নিত করা হয়। শুভেন্দু অধিকার আর মাও নেতা কিষেণজী’র ‘কুৎসিত চক্রান্ত’র কথা তুলে ধরা হয়। সিপিআইএম জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের কথায়, “ক্ষমতায় এসে তৃণমূল পুলিশ প্রশাসনকে অনৈতিক ভাবে ব্যাবহার করে, একের পর এক সাজানো মামলায় সিপিআিইএম নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করে জেলে ভরে। ফুল্লরাদি ২০১০ সাল থেকে ঘর ছাড়া। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষর দায়িত্ব সহ মহিলা সমিতির এবং পার্টির জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। মেদিনীপুর শহরেই থাকতেন। ২০১৪ সালে সাজানো হয় মিথ্যা মামলা। ৫৬ বছর বয়সে নাকি ফুল্লরাদি এক হাতে রাইফেল চালিয়ে কাঁসাই নদীর পাড় ধরে নেতাই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসেন। অসুস্থ ছিলেন। শুধু তাই নয়, এই ষড়যন্ত্রে মোট ২০ জনকে জেলে ভরা হয়। ইতিমধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়। আট বছর ফুল্লরা মন্ডলকে জেলে আটক করে রাখা হয় নানান কায়দায়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে বিচার চলে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঢুকতে পারবেন না, এই শর্তে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।” জানা যায়, আদালতের শর্ত মেনে তিনি ঝাড়গ্রামে থাকবেন।

thebengalpost.net
বরণ করে নেওয়া হল ফুল্লরা মণ্ডল-কে :

প্রসঙ্গত, নেতাই কান্ডে এখনও পর্যন্ত মোট ৬ জন জামিন পেলেন। এক মাস আগে পিন্টু রায় ও গন্ডীবন রায় জামিন পেয়েছেন। গত সপ্তাহে অশ্বিনী চালকও জামিন পেয়েছেন। ২২ আগস্ট জামিন পেলেন ফুল্লরা মণ্ডল। উল্লেখ্য যে, জেলে থাকাকালীনই ফুল্লরা হারিয়েছেন মা ও দাদাকে। এদিন, চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেন, “এতোটাই প্রতিহিংসা পরায়ণ ছিল সরকার যে, আমাকে প্যারোলেও মুক্তি দেওয়া হয়নি।” কৃষক পরিবারে জন্ম। পড়াশুনো শেষে পার্টির ডাকে সর্বক্ষনের জীবন। জঙ্গলমহলের মহিলাদের সংগঠিত করার লড়াই শুরু সেই থেকে। আট বছর জেলের ভিতর, আরো ৪-৫ বছর ঘরছাড়া, সব হারিয়েছেন। তবুও বিশ্বাস হারাননি! চন্ডীমঙ্গলের ফুল্লরার দুঃখের ‘বারোমাস্যা’র মতোই সিপিআইএমের ফুল্লরাও জেল-যন্ত্রণার ‘বারোমাস্যা’ কাটিয়ে অবশেষে মুক্ত হলেন। এদিন, জেল থেকে বেরিয়েই তাই, জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের দিকে মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখিয়ে ইশারা করেন, ‘লড়াই জারি থাকবে কমরেড!’

thebengalpost.net
ফুল্লরা মণ্ডল-কে নিয়ে মিছিল সিপিআইএম-এর :

thebengalpost.net
সেদিনের সেই নেতাই গ্রাম: