দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ ডিসেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর থানার অন্তর্গত গোলাড় সুশীলা বিদ্যাপীঠ। বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী আজ অর্থাৎ শুক্রবার বিদ্যালয়ে আসেনি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আগের রাতেই তার ‘বিয়ে’ হয়েছে! এরপর, বিদ্যালয়ের ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’কে জানাতেই ছাত্রীরা গিয়ে বিয়ের পাত্র অর্থাৎ নাবালিকাকে বিয়ে করার দায়ে অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি ঘেরাও করে। অবিলম্বে ছাত্রীকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানায় ছাত্রীরা। পরিস্থিতি বুঝতে পেরেই ছুটে যায় কেশপুর থানার পুলিশ, বিডিও অফিসের আধিকারিকরা। পরিস্থিতি পাল্টাতে ছাত্রীকে বাপের বাড়িতে ফেরত পাঠায় ছেলের বাড়ির লোক। ঘন্টাখানেকের মধ্যে ইউনিফর্ম পরিয়ে ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসে ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’। “সাবালিকা না হলে বিয়ে দেব না” মুচলেকা আদায় করেন আধিকারিকরা। শুক্রবার এই নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোলাড় এলাকায়।
গোলাড় সুশিলা বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী শুক্রবার বিদ্যালয়ে হাজির হয়নি। স্থানীয়রা জানায় ওই ছাত্রীর আগের রাতেই বিয়ে হয়েছে প্রতিবেশী এক যুবকের সাথে। নাবালিকার বিয়ে আটকানোর জন্য বিদ্যালয়ে তৈরি ছিল গর্বের ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’। খবর পাওয়ার সাথে সাথে দৌড়য় তারা। বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরেই ওই ছাত্রীর বাড়ি। ছাত্রীর বাড়ির লোকজন জানায় সে মাসির বাড়ি গিয়েছে। কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হওয়াতে খোঁজ নিয়ে কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যারা ছাত্রীর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে থাকা পাত্রের বাড়িতে হাজির হয়ে যায়। বাড়ি ঘেরাও করে অবিলম্বে ছাত্রীকে ফেরত দেওয়ার দাবি করে। অস্বীকার করে ছেলের বাড়ির লোকজন। তারা জানায় ছাত্রী এখানে নেই। অন্যদিকে, বিদ্যালয় মারফত খবর যায় পুলিশ ও বিডিও অফিসে। কেশপুর থানার পুলিশ সহ বিডিও অফিসের আধিকারিকরা হাজির হয়ে যান ওই বাড়িতে। পরিস্থিতি বেগতিক মনে হওয়াতে ছাত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ওই ছাত্রীকে তার নিজের বাপের বাড়িতেই দেখা যায়! ছাত্রী জানায়, “বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দেবে জানতে পেরে আমি মাসির বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। আমি স্কুলে যাব।”
কেশপুর থানার পুলিশ এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বিয়ে না করার পরামর্শ দিয়ে ছাত্রীর বাবা-মাকেও এ বিষয়ে সাবধান করে দেয় পুলিশ। বিডিও অফিসের আধিকারিকরা লিখিত মুচলেকা নেয় ছাত্রীর বাবা-মায়ের কাছ থেকে। কেশপুর বিডিও অফিসের আধিকারিক পিয়ালী কুইলা বলেন, “ছাত্রী সহ তার পরিবারকে বোঝানো হয়েছে। বিয়ে বাতিল করে পড়াশোনা করাবে এমন মুচলেকা লেখানো হয়েছে।” ছাত্রীর বাবা বলেন, “বিয়ে এখনো দিইনি। ও মাসির বাড়ি গিয়েছিল।আধিকারিকরা এসেছিলেন সবার সঙ্গে কথা বলেছি। অভিযোগ মিথ্যা।” বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিপিকা দাস বলেন, “আমাদের কন্যাশ্রী ক্লাব এর আগেও একাধিকবার এইভাবে নাবালিকার বিয়ে আটকে সাফল্য পেয়েছে। রাজ্য স্তরের সম্মানিত হয়েছিল। আজ আবারো গর্বিত করল আমাদের।” বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ পড়িয়া-ও জানিয়েছেন, “ওরা সত্যিই আমাদের গর্ব!”