তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ মার্চ:একেই বোধহয় বলে ঘোর কলি! সম্পত্তির লোভে জলজ্যান্ত মানুষ-কে ‘মেরে ফেলতে’ও পিছপা নন স্বার্থান্বেষীর দল। এমনই ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের। সম্পত্তি হাতানোর জন্য জীবিত বৃদ্ধার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ সহ ভুয়া শংসাপত্র বের করে প্রতারণার অভিযোগ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সম্পর্কে তিনি আবার ওই বৃদ্ধার আত্মীয়! যাচাই না করে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ায়, প্রশ্ন উঠছে গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়েও। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার ধরমপুর গ্রামের ৭৪ বছর বয়সী অন্নপূর্ণা পাঁজা’র সাথে। অভিযুক্ত আত্মীয়ের নাম সুদর্শন মল্লিক।

thebengalpost.net
অভিযোগ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেও :

জানা যায়, অশীতিপর বৃদ্ধা অন্নপূর্ণা পাঁজার বাপের বাড়ি গড়বেতা থানার ফতেগড় গ্রামে। শ্বশুর বাড়ি চন্দ্রকোনার ধরমপুরে। ধরমপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে স্বামী রাসবিহারী পাঁজা ও তিন ছেলের সংসারে জীবিত অবস্থায় রয়েছেন অন্নপূর্ণা দেবী। অন্নপূর্ণা পাঁজার ছেলেদের দাবি, গড়বেতার ফতেগড় গ্রামে তাঁদের মামা দাদুর (অন্নপূর্ণার বাবা) রেখে যাওয়া কিছু সম্পত্তি জমি জায়গা রয়ে গিয়েছে। দাদুর দুই মেয়ে। একজন মারা গিয়েছেন। বর্তমানে, অপর মেয়ে অন্নপূর্ণা পাঁজা তথা তাঁদের মা জীবিত রয়েছেন।দাদুর কোনও ছেলে না থাকায়, তাঁদের মা অন্নপূর্ণা পাঁজাই বাপের বাড়ির পড়ে থাকা সম্পত্তির একমাত্র দাবি বৃদ্ধার ছেলেদের। তাঁদের অভিযোগ, মায়ের বাপের বাড়ির পড়ে থাকা সম্পত্তি হাতানোর জন্য ফতেগড় গ্রামের বাসিন্দা, সুদর্শন মল্লিক নামে এক ব্যক্তি ভুয়ো শংসাপত্র বের করে প্রতারণার চেষ্টা করছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, গড়বেতার আমশোল গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তাঁদের মা অন্নপূর্ণা পাঁজার নামে ডেথ সার্টিফিকেট বেরও করা হয়েছে! এছাড়াও, বিভিন্ন দপ্তর থেকে তাঁদের মায়ের নামে ভুয়ো শংসাপত্র বের করে মায়ের বাপের বাড়ির সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টা করেছেন ওই সুদর্শন মল্লিক। তাঁরা জানিয়েছেন, বেশকিছু দিন আগে সুদর্শন মল্লিক তাঁদের মায়ের বাপের বাড়ির জমি জায়গা নিজের নামে করার জন্য গড়বেতা ৩ নং ব্লকের বিএলআরও দপ্তরে জমির রেকর্ডের জন্য আবেদন করেন এবং দপ্তর থেকে এনকোয়ারি করতে গেলে তাঁরা সুদর্শন মল্লিকের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন। এই ঘটনা জানার পর, সুদর্শন মল্লিকের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনও সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ বৃদ্ধার ছেলেদের। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় আমশোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বৃদ্ধার ছেলেরা।

thebengalpost.net
অন্নপূর্ণা পাঁজা:

একজন বৃদ্ধা যিনি এখনও স্বামী ছেলেদের নিয়ে জীবিত অবস্থায় রয়েছেন তাঁর নামে কি করে গ্রাম পঞ্চায়েত ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করে? যদিও এই বিষয়ে আমশোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উমা রানী মাল জানান, “জন্ম মৃত্যুর সার্টিফিকেট আমরা এভাবে দিতে চাইনা। কিন্তু, অনেক সময় পঞ্চায়েত সদস্যরা চাপ দেয়। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সদস্যদের কথা বিশ্বাস করে, কিছু ক্ষেত্রে দিয়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে আলোচনা করে খতিয়ে দেখতে হবে।” আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সুদর্শন মল্লিক অবশ্য তাঁর ভুলের কথা পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “অন্নপূর্ণা পাঁজা সম্পর্কে আমার পিসি হন। তাঁর বাপের বাড়ির পড়ে থাকা একটি জমি আগে তাঁরা নিজেরা চাষ করতো, কিন্তু টাকাপয়সা নিয়ে তাঁরা জমিটি আমাকে ছেড়ে দেয়। বহু বছর ধরে সেই জমি চাষ করছি আমি। সেই জমির কাগজ না থাকায়, আমি আবেদন করেছিলাম।” যদিও, দপ্তর থেকে মঞ্জুর করেনি বলে জানান সুদর্শন মল্লিক। এদিকে, এই ঘটনায় সুবিচার চাইছেন বৃদ্ধার পরিবার।