দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ অক্টোবর: ডেকে ডেকে ৫০ হাজার টাকা করে লোন (ঋণ) দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এরপর, মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে, বাকি ৪৫ হাজার টাকা গায়ের করে দেওয়ার অভিযোগ ব্যাঙ্কের তৎকালীন ম্যানেজার এবং এক লোন এজেন্টের বিরুদ্ধে। এদিকে, ব্যাঙ্কের তরফে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণের বোঝা চাপানো হয়েছে মেদিনীপুর গ্রামীণের শতাধিক বাসিন্দার নামে। তাঁদের বাড়িতে বারবার পাঠানো হচ্ছে নোটিশ। চরম সমস্যায় পড়ে, শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকাবাসী। ঘটনাটি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গুড়গুড়িপাল থানার অন্তর্গত চাঁদড়া এলাকার।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২০১২ সালে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের (পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক বলে জানা যায়) চাঁদড়া শাখার অথরাইজড এজেন্ট পিনাকি রঞ্জন দে চাঁদড়া দু’নম্বর অঞ্চলের অশোক মাহাতো, মন্টু পাত্র, পিন্টু নায়েক, কমল রুইদাস, পার্বতী রায়, রবীন্দ্র মাহাতো, কৃষ্ণ রুইদাস সহ প্রায় ২৫০-৩০০ জন গ্রামবাসীদের ৫০ হাজার টাকা (পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের চাঁদড়া শাখা থেকে) করে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখান। এরপর, তাঁদের KCC লোনের জন্য আবেদন করতে বলেন পিনাকি। কথা মতো ওই অঞ্চলের প্রায় আড়াই থেকে তিনশো গ্রামবাসী আবেদন করেন। এরপর, ২০১২ সালের মার্চ মাসে আবেদনকারী গ্রামবাসীদের নগদ ৫ হাজার টাকা হাতে দেওয়া হয় ব্যাঙ্কের তরফে এবং বলা হয় বাকি ৪৫ হাজার টাকা ৭-১০ দিনের মধ্যে তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। কিন্তু, আবেদনকারী গ্রামবাসীদের অভিযোগ, আর কোনো টাকা তাঁদের একাউন্টে ঢোকেনি!
শনিবার মেদিনীপুর আদালতে দাঁড়িয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ব্যাঙ্কের তরফে বলা হয়, যে পাঁচ হাজার টাকা তাঁদের হাতে নগদ দেওয়া হয়েছে, তা ফেরৎ দিতে হবে না। কিন্তু, ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর, ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে হঠাৎই গ্রামবাসীদের কারুর ১ লক্ষ, কারুর ৭০ হাজার, কারুর ৫০ হাজার সুদ সহ ঋণ খেলাপি নোটিশ পাঠানো হয় পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক এর চাঁদড়া শাখার পক্ষ থেকে। হাতে নোটিশ পেয়ে চিন্তায় ঘুম উড়েছে আবেদনকারী গ্রামবাসীদের! এই বিষয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি গ্রামবাসীদের কোন কথা শুনতে নারাজ। তিনি গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেন, সুদ সহ ঋণ না মেটালে ব্যাংক আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। কোন দিকে কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে প্রতারিত গ্রামবাসীরা আদালতের শরণাপন্ন হন। পাশাপাশি ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে অভিযোগ জানানো হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরেও।
প্রতারিত গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তৎকালীন ব্যাংক ম্যানেজার সুব্রত চক্রবর্তী এবং ব্যাঙ্কের অথরাইজড এজেন্ট পিনাকি রঞ্জন দে’র যোগসাজসে নিরক্ষর গ্রামবাসীদের লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এখন, সেই টাকার দায় গ্রামবাসীদের উপর চাপানো হচ্ছে। প্রতারিত গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, তাঁদের ব্যাংক একাউন্টে বিভিন্ন ভাতা বা ১০০ দিনের কাজের যে সমস্ত টাকা ঢুকছে, সেই টাকা কেটে নিচ্ছে ব্যাংক। অন্যদিকে, অন্যতম অভিযুক্ত ব্যাংকের অথরাইজড এজেন্ট পিনাকি রঞ্জন দে গ্রামবাসীদের সঙ্গে ব্যাংক যে প্রতারণা করেছে, তা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “তৎকালীন যিনি ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন, সুব্রত চক্রবর্তী তাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত এই ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা, পুরো বিষয়টি নিয়ে তিনি বলতে পারবেন।” যদিও, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ওই ব্যাংক ম্যানেজার সুব্রত চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ফোন কেটে দেন।