দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে এসেছে মেদিনীপুর। এক্ষেত্রেও তাই হল! পেশায় শিক্ষক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণ থানার গোকুলপুর এলাকার বাসিন্দা সুমন কল্যাণ ধাড়া বছর পাঁচেক আগে (২০১৯ সালে) নামকরা একটি বহুজাতিক সংস্থার (IFB-র) ওয়াশিংমেশিন কিনেছিলেন খড়্গপুর শহরে অবস্থিত ওই সংস্থা অনুমোদিত বিপণী (শোরুম) থেকে। ওয়াশিংমেশিন যথারীতি বাড়িতে পৌঁছেও দেওয়া হয়। তবে, ‘লিখিত’ প্রতিশ্রুতিমতো ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেটি ইনস্টল করে দেওয়া হয়নি। এরপরই, সংস্থার টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানান তিনি। এরপর, কোম্পানি থেকেই নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে দেওয়া হয়। যথারীতি সেই দিনে ‘ছুটি’ নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন শিক্ষক সুমন বাবু। তবে, কথা রাখেনি নামকরা ওই বহুজাতিক সংস্থা। উল্টে দুর্ব্যবহার করা হয় তাঁর সাথে। জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই এলাকায় গিয়ে ইন্সটল করা সম্ভব নয়!
এরপরই, প্রতিবাদী ওই শিক্ষক বহুজাতিক সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ করেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন খড়্গপুর গ্রামীণের ওই শিক্ষক। সেখানে দু’পক্ষকে নিয়ে শুরু হয় শুনানি বা হেয়ারিং। শুনানি চলাকালীন বহুজাতিক সংস্থা দাবি করে, ক্রেতার বাসস্থান গ্রামাঞ্চলে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ এবং এই সুবিধা কেবলমাত্র শহরাঞ্চলের জন্য। যদিও, এই যুক্তি ধোপে টেকেনি! কারণ ওয়াশিংমেশিন-টি ওই সংস্থাই পৌঁছে দেয় ক্রেতার বাড়িতে। তাছাড়াও, ক্রেতার বাসস্থান খড়্গপুর শিল্পাঞ্চল এলাকার মধ্যেই পড়ে। সর্বোপরি, সারা দেশে একই দাম হওয়ায়, সব ক্রেতারই একই সুবিধা বা পরিষেবা প্রাপ্য! দীর্ঘ সওয়াল-জবাব তথা আইনি প্রক্রিয়া শেষে সোমবার রায় দান করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। ওই বহুজাতিক সংস্থাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একমাসের মধ্যে ওই টাকা মামলাকারীর অর্থাৎ শিক্ষক সুমন কল্যাণ ধাড়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দাতে হবে। দেরি হলে ৯ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের প্রধান তথা DCDRC (District Cunsumer Disputes Redressal Commission)-র প্রেসিডেন্ট সমীরণ দত্ত এবং কমিশনের সদস্যা অংশুমতী নন্দা।
মঙ্গলবার বিকেলে এই বিষয়ে শিক্ষক সুমণ কল্যাণ ধাড়া বলেন, “এরকমভাবেই বিভিন্ন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া বা সঠিক পরিষেবা না দেওয়া কিংবা ক্রেতাকে হয়রান করা বহুজাতিক সংস্থাগুলির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই এদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যই আমি ধৈর্যের সাথে পাঁচ বছর ধরে লড়াই চালিয়ে গেছি। আপনাদের প্রতি বার্তা, যদি মনে হয় কোথাও ঠকছেন, তবে মেদিনীপুর শহরের অশোকনগরে অবস্থিত ক্রেতা সুরক্ষা আদালত বা কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারেন।” তিনি এও জানান, আইনি খরচটুকু বাদ দিয়ে বাকি অর্থ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডকে দান করবেন। এই আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি আইনজীবী রঞ্জন মাইতি, সৌম্যব্রত চক্রবর্তী ও শান্তনু ঘোষের সহায়তা পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।