শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর: চুরির অভিযোগে এক নাবালককে নির্মমভাবে মারধর করে মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে। আর, সেই ঘটনার পর দিনই ওই নাবালকের রহস্য-মৃত্যু ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবংয়ে! ঘটনায় অভিযুক্ত ওই তৃনমূল পঞ্চায়েত সদস্য সহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয় বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তথা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সহ ২ জনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন মেদিনীপুর আদালতের বিচারক। বাকি ৫ জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

thebengalpost.net
ঘটনা ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য:

জানা যায়, বুধবার সকালে সবং ব্লকের বড়চাহারা এলাকায় ১৩ বছরের এক নাবলকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে ওই নাবালক বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে বলে জল্পনা ছড়ায়। পরে ওই নাবালকের আত্মীয়দের মারফৎ চাঞ্চল্যকর তথ্য ওঠে আসে। জানা যায়, গত মঙ্গলবার ওই নাবালক বাড়ির পাশে এক ব্যক্তির বাড়িতে চুরি (অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি) করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মনোরঞ্জন মালকে। তিনি তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই নাবালককে মারধর করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এরপর, শাস্তি হিসাবে স্থানীয় একটি সেলুনে নিয়ে গিয়ে মাথা ন্যাড়া করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন! পরে ওই গ্রামে গিয়ে বুধবার সন্ধ্যে নাগাদ একটি আলোচনা সভার ডাক দেন বলে জানা যায়। আলোচনা সভায় ওই নাবালককেও ডাকা হয়। সেখানে তাকে ফের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তারপরই বুধবার সকালে বাড়ির ভেতর থেকে ওই নাবালকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়!

ওই নাবালকের আত্মীয় সূত্রে জানা যায়, ১৩ বছরের ওই কিশোরকে তার বাবা-মা শৈশবেই ছেড়ে চলে যায়। বাড়িতে সে একাই থাকত। মৃত নাবালকের এক আত্মীয় অভিযোগ করেন, ওই নাবালককে পঞ্চায়েত সদস্য সহ কিছুজন মিলে নির্মমভাবে মারধর করেছে। তাতেই তার মৃত্যু হয়। বুধবার সবং থানাতে একটি অভিযোগও দায়ের করেন তিনি। তদন্তে নেমে সবং থানার পুলিশ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মনোরঞ্জন মাল সহ ৬ জনকে বুধবার বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে পুলিশ ওই ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার ৬ জনকে মেদিনীপুর আদালতে পেশ করা হলে মনোরঞ্জন সহ ২ জনের দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকিদের জেল হেফাজত হয়। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ওই নাবালক যে বিষ খেয়েছে এরকম কোন প্রমাণ তদন্তে উঠে আসেনি। এর বেশি পুলিশ কিছু বলতে চায়নি। অপরদিকে, অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যও মুখ খোলেননি ক্যামেরার সামনে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি আশিস হুদাইত এই বিষয়ে জানিয়েছেন, “আইন আইনের পথে চলবে। দোষী হলে, সে যে দলই করুক না কেন তার শাস্তি হবে।” শুক্রবার এই ঘটনায় আরও ১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন: