দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ নভেম্বর: “আমাদের মৃত্যুর পর যদি আমার বাড়ির লোক আমার মৃতদেহ (ডেডবডি) চাইতে আসে, দেওয়ার দরকার নেই। বরং, পারলে আমাদের দু’জনকে একসঙ্গে একটা চিতায় নিয়ে যেও।” এমনই মর্মান্তিক সুইসাইড নোট লিখে ‘আত্মহত্যা’ করলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক নাবালিকা। তাঁর সঙ্গে তাঁর সাবালক প্রেমিক (বা স্বামী) ও মৃত্যুবরণ (বা, আত্মহত্যা) করলেন। রবিবার তাঁরা হাওড়া ডিভিশনের সাঁকরাইল ও আন্দুলের মাঝামাঝি এলাকায় চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে। দু’জনই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানা এলাকার তালদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর (২০২২) বছর ১৭’র দোয়েল (নাম পরিবর্তিত) তাঁর বছর ২২-এর প্রেমিক দেবরূপের (নাম পরিবর্তিত) হাত ধরে বাড়ি ছাড়েন। ওই দিনই তাঁরা বিয়েও করেন বলে জানা যায়। এরপরই, নাবালিকার পরিবারের তরফে দাঁতন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় দেবরূপ ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে। তবে, পুলিশের ভয়ে তাঁর বাবাও ওই দিন থেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। গত ৫ নভেম্বর দাঁতন থানার-ই একটি এলাকা থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এই খবর পৌঁছয় দেবরূপ ও দোয়েলের (নাম পরিবর্তিত) কাছে। এরপরই, ক্ষোভে-দুঃখে ফেটে পড়েন নাবালিকা! নিজের বাবা তথা পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ, অভিমান ও যন্ত্রণার কথা লিপিবদ্ধ করেন নাবালিকা। তারপর, প্রেমিক তথা স্বামীকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন চলন্ত ট্রেনের সামনে! ঘটনাটি হাওড়া ডিভিশনের সাঁকরাইল স্টেশন ও আন্দুল স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় ঘটে বলে সূত্রের খবর। রবিবার অর্থাৎ ৬ নভেম্বর তাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয় শালিমার জিআরপি’র তরফে। খবর পৌঁছয় দাঁতন থানায়। তারপরই শোকে ভেঙে পড়ে গোটা এলাকা!
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাওড়াতেই রেলের হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর সোমবার সকালে গ্রামে পৌঁছেছে দেবরূপের নিথর দেহ। আজ (সোমবার) রাত্রি নাগাদ বা আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকালে পৌঁছতে পারে নাবালিকার দেহও। তবে, মেয়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে রাজি নয় তাঁর পরিবার। এমনটাই জানা গেছে এলাকা সূত্রে। শোকস্তব্ধ এলাকাবাসী যদিও চাইছেন, দেবরূপ ও দোয়েলের (নাম পরিবর্তিত) শেষ ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে তাঁদের এক চিতায় দাহ করা হোক। স্থানীয় সমাজকর্মী তথা শাসকদলের এক যুব নেতা সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, “জানিনা ওরা কেন এরকম করলো! কাজটা একেবারেই ঠিক করেনি। আমরা মেনে নিতে পারছি না। তবুও, আমরা চাইছিলাম ওদের শেষ ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে!” এদিকে, আজই আদালত থেকে জামিনও পেয়েছেন দেবরূপের (নাম পরিবর্তিত) বাবা। প্রসঙ্গত, দেবরূপের সঙ্গে দোয়েলের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে, তা কোনোভাবেই মেনে নেননি দোয়েলের (নাম পরিবর্তিত) পরিবার। বরং, তাঁর অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করা হয়েছিল। এই সমস্ত কথা সুইসাইড নোটে লিপিবদ্ধ করে দোয়েল (নাম পরিবর্তিত) লিখেছেন, “আমি এমনি এমনি পালিয়ে আসিনি। আমার অন্যত্র বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল বলেই, পালিয়ে এসেছিলাম। শুধু তাই নয়, আমার উপর মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছিল, তা সহ্য করতে না পেরেই পালিয়ে এসেছিলাম।” উল্লেখ্য যে, মেয়েদের সবথেকে আদর ও ভালোবাসার জায়গা তার বাবা! সেই ‘বাবা’র প্রতি নিজের সমস্ত ক্ষোভ ও অভিমান ব্যক্ত করে নাবালিকা লিখে গেছেন (সুইসাইড নোটে), “আমাদের এই পরিণামেই হয়তো আমার বাপি সবথেকে খুশি হবে! অনেক চেষ্টা করেছিল আমাদের আলাদা করার জন্য, পারেনি। তা সম্ভব নয়।” নাবালিকার শেষ ইচ্ছে ছিল, “আমাদের যেন এক চিতায় নিয়ে যাওয়া হয়!” হয়তো তাও পূরণ হবেনা! (নাবালিকার বিয়ে কিংবা আত্মহত্যা বেঙ্গল পোস্ট সমর্থন করেনা! শুধুমাত্র মর্মান্তিক এই ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রচ্ছদের ছবি বা ফিচার ইমেজ- দাঁতন থানার।)