দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ জুলাই: ১৯৮৫ সালের ২২ এপ্রিল শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন রাজ্য সিপিআই এর সম্পাদক বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়। ৩৭ বছরের সুপ্রাচীন সেই অট্টালিকা সম মেদিনীপুর জেলা পার্টি অফিসের ভবন এবার শিক্ষা আর স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যবহৃত হবে। দলের-ই দুই সদস্য-কে ভাড়া দেওয়া হয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডক্টরস চেম্বার এবং ছাত্রী নিবাস করার জন্য। বিকল্প পথে কিছু আয়ের মাধ্যমে তিন তলা বিশিষ্ট পার্টি অফিসের এই ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করাই মূল উদ্দেশ্য। মঙ্গলবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মেদিনীপুর জেলা সিপিআই-এর নেতৃত্বরা। কটাক্ষ করতে অবশ্য ছাড়েননি বিরোধীরা!

thebengalpost.net
ডক্টরস চেম্বার অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার:

প্রসঙ্গত, জেলা শহর মেদিনীপুরের রবীন্দ্রনগরে (বিটি কলেজের উল্টো দিকের গলিতে) অবস্থিত মুখোমুখি দুই বিশাল অট্টালিকা। সিপিআই- এর জেলা পার্টি অফিস হিসেবেই সকলে জানতেন। তার মধ্যেই একটি ‘অট্টালিকা’ ভাড়া দেওয়া হল। নেতা-কর্মীদের দাবি, রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছিলেন না। তাই দলের মধ্যে আলোচনা করে বহু স্মৃতি বিজড়িত জেলা কার্যালয় ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। দলের এক জেলা নেতার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি “এছাড়া উপায় ছিলনা!” গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তাই সিপিআই কার্যালয়ের পেছনের অংশে শুরু হয়ে গেছে, মেডিক্যাল ইনফোটেক অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বার। সামনের অংশ হয়েছে ছাত্রী নিবাস। খুব তাড়াতাড়ি তা চালু হবে বলেও জানা গেছে। ঘটনার কথা স্বীকার করে সিপিআই রাজ্য নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ রানা বলেন, “পুরানো ওই জেলা কার্যালয়ের উল্টোদিকে আমাদের বিশাল একটি কার্যালয় তৈরি করা হয়েছিল। সেটিও আছে। দুটি বিল্ডিংকে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই দলে আলোচনা করে মেস বা ডক্টরস চেম্বার করতে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” যদিও একথা সরাসরি স্বীকার করতে চাননি সিপিআই এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক অশোক সেন। তিনি বলেন, “আসলে ঠিক ভাড়া নয়! পুরানো জেলা কার্যালয় ভবনের পিছন দিকের অংশটা পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছিল। তাই পিছিন দিকটা ওদের (দলেরই এক সদস্য ও তার পরিচিতদের) ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। সামনে আমাদের কমরেডরা বসবেন। নতুন ভবনের পাশাপাশি পুরানো অফিসও আমাদেরই আছে।”

thebengalpost.net
মুখোমুখি দুই কার্যালয়, বাম দিকের লাল ভবন-টি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে:

যদিও, তিনতলা গোটা ভবনটাই ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে! তবে, ভবনের সামনে এখনো লেখা আছে, “ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা কার্যালয়।” এক হোল টাইমার বললেন, “ভবন ঘিরে কত না স্মৃতি। জড়িয়ে রয়েছে বিশ্বনাথ মুখার্জি, গীতা মুখার্জি, নারায়ণ চৌবে, গুরুদাশ দাশগুপ্ত, প্রবোধ পাণ্ডা’দের মতো একাধিক সিপিআই নেতার স্মৃতি। এখান থেকেই এক সময় পরিচালনা হয়েছে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কমিউনিস্ট পার্টি।” জানা যায়, রাজ্যের পালা বদলের পর থেকে ক্রমেই বামেরা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। কমেছে সদস্য সংখ্যা। বিধায়ক, সাংসদ সংখ্যা শূন্য! তাই, আর উপায় ছিলোনা! তবে, তাঁরা আশাবাদী, “বামেরা ধীরে ধীরে নিজেদের শক্তি ফেরাচ্ছে। পুনরায় বাড়ছে সদস্য সংখ্যা। অদূর ভবিষ্যতে তাই ফের দু’টি কার্যালয় ব্যবহারের মতো পরিস্থিতি হলে সিদ্ধান্ত বদল করা হবে।” এনিয়ে যদিও সিপিআই তথা বামেদের কটাক্ষ করে বিজেপি’র জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস জানিয়েছেন, “বামেদের সংরক্ষণ করে রাখার মতো পরিস্থিতি। দেশে কংগ্রেস-সিপিআই’রা সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। তাই, পার্টি অফিস ভাড়া দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আর, এরাজ্যে তো বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল মিলেমিশে একাকার! ভবিষ্যতে ওখানে তৃণমূলের ঝান্ডাও উড়তে পারে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনে বিরোধী অস্তিত্ব আজ বিলীন। সিপিআইএম সহ তাদের শরিকরা সাইন বোর্ডে পরিণত! যদিও, ওঁদের সিদ্ধান্ত নিয়ে বলার কিছু নেই, তবে এই অট্টালিকা সম কার্যালয়গুলো যদি এখন মানুষের কাজে লাগে ভালোই হয়! চিন্তা নেই, আগামী কয়েকবছরের মধ্যে বিজেপি’র কার্যালয়গুলিও নিলাম করে দিতে হবে।”

thebengalpost.net
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কার্যালয়: