দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ৯ আগস্ট: দীর্ঘদিনের সঙ্গী দুধ সাদা অ্যাম্বাসেডর। নম্বর ডব্লুবি ০৬-০০০২ (WB 06-0002)। বুধবার (৯ আগস্ট) সাত সকালেই হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাধের সেই দুধ সাদা অ্যাম্বাসেডর। যদিও, বুদ্ধ বাবু (Buddhadeb Bhattacharjee)-কে বাড়ি ফিরতে হলো ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চেপেই! অগ্যতা বুদ্ধ বাবুর অ্যাম্বুল্যান্সের পিছু পিছু সেও ফেরে পাম অ্যাভিনিউয়ের ঠিকানায়। যদিও, সেই গাড়িতে সওয়ার হননি কেউই। প্রসঙ্গত, ১২ দিন পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে নিজের প্রিয় পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ফিরলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে, বুধবার (৯ আগস্ট) স্ট্রেচারে করে এনে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়। সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসকদল এবং স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। বুদ্ধদেব হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় দেখা যায়, তাঁর দাড়ি-গোঁফ পরিষ্কার করে কামানো। মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক। পাশে রাইলস টিউব। হাত ধরে রেখেছেন এক জন চিকিৎসক। অতি সন্তপর্ণে তাঁকে ধরে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়। বেলা ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বাড়ি পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্সটি। পৌঁছয় প্রিয় ‘অযান্ত্রিক’ দুধ সাদা অ্যাম্বাসেডরও।
উডল্যান্ড হাসপাতালে ১২ দিন চিকিৎসার পরে এখন অনেকটাই সুস্থ বুদ্ধ বাবু। ফুসফুসের সংক্রমণ প্রায় নেই। তবে, আপাতত তাঁকে কড়া নজরদারির মধ্যেই রাখা হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, বাড়িতেও আপাতত বাইপ্যাপ সাপোর্টেই থাকবেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরিচর্যার জন্য এক জন নার্স সবসময় তাঁর বাড়িতে থাকবেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিয়মিত তাঁর বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে আসবেন। আপাতত এক মাস বুদ্ধ বাবু হোম কেয়ার সাপোর্টে থাকবেন বলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-কে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার আগে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘যখন ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন ওঁর শ্বাসকষ্ট ছিল। তন্দ্রাভাব ছিল। পরীক্ষার পর অ্যান্টিবায়োটিক, নেবুলাইজেশন থেরাপি দেওয়া হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্য ১১ সদস্যের একটি মেডিক্যাল দল তৈরি করা হয়। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন ওঁকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখার। বুদ্ধদেবের ফুসফুসে নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া শনাক্ত করি আমরা। এর পর অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপির বদলও হয়।’’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘‘বিভিন্ন পরীক্ষার পর তাঁর কিছু ওষুধের পরিবর্তন করা হয়। উনি চিকিৎসায় সাড়া দেন। এর পর, ৩১ জুলাই তাঁকে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর থেকে বের করতে সফল হই। পরে তিনি ছিলেন নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে। রাইলস টিউবে খাওয়ানো অব্যাহত থাকে। এর পর অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপির বদলও হয়। বিভিন্ন পরীক্ষার পর তাঁর কিছু ওষুধের পরিবর্তন করা হয়। উনি চিকিৎসায় সাড়া দেন। ওনার সংক্রমণও কমতে থাকে।” বুধবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাড়ি থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য জানান, বুদ্ধদেব বাড়ি ফিরলেও তাঁকে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। বুদ্ধদেব যেন সুস্থ থাকেন, সেই জন্য সকলকে আন্তরিক ভাবে প্রার্থনা করার অনুরোধও তিনি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আন্তরিক ভাবে প্রার্থনা করুন। শুভেচ্ছা জানান। উনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। বাড়িতেও যেন সুস্থ হয়ে থাকতে পারেন। ওঁকে কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে।’’ যে ভাবে সবাই বুদ্ধদেবের খোঁজ নিয়েছেন এবং পাশে থেকেছেন, তার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মীরা দেবী।