দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ নভেম্বর: দু’জনই বিবাহিত। দু’জনেরই সন্তান আছে। তবে, প্রেমের (বা, পরকীয়ার) টানে সেই ঘর-সংসার-সন্তানদের ছেড়ে, গ্রামের পাশে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ‘কুঁড়ে ঘর’ তৈরি করে গত ৬ বছর ধরে বসবাস করছিল। একপ্রকার তা মেনেও নিয়েছিলেন দুই পরিবার থেকে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীদের মতে, প্রথম কয়েক বছর সব ঠিকঠাকই ছিল। তারপরই হয়তো প্রেম-পিরীতি কমতে থাকে! শুরু হয় সঙ্গিনীর উপর প্রেমিকের অকথ্য অত্যাচার, নির্যাতন। এভাবেই চলতে থাকে। এরমধ্যেই, গতকাল অর্থাৎ সোমবার দুপুর নাগাদ বছর ৪২ এর তরুণ সিং- এর প্রেমিকা বা লিভ-ইন পার্টনার বছর ৩২ এর পবিত্রা সিং ‘রহস্য মৃত্যু’র ঘটনা সামনে আসে এলাকাবাসীর কাছে। অভিযোগ, পবিত্রা-কে খুন করে পুঁতে দিয়েছে তাঁর সঙ্গী বা প্রেমিক। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে ইতিমধ্যে। আজ, মঙ্গলবার, ওই গ্রামে, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দেহ উদ্ধার করা হয় এবং ময়নাতদন্ত সহ সমস্ত ধরনের পুলিশি তদন্ত হবে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, খড়্গপুর গ্রামীণ থানার খেমাশুলি সংলগ্ন ভালুকমাচা গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন, গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর ৩ টা-সাড়ে ৩ টা নাগাদ তরুণ নামে ওই প্রেমিক এলাকাবাসীদের মধ্যে কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে জানায়, পবিত্রা’র মৃত্যু হয়েছে। দাহ করতে হবে। এলাকাবাসী জানান, এখন তাঁরা চাষের কাজে ব্যস্ত, কিছুক্ষণ দেরি হবে। অভিযোগ, এর মধ্যেই পবিত্রাকে নিজেদের ‘কুঁড়ে ঘর’ থেকে কিছুটা দূরে, মাঝ জঙ্গলে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে দেয় তরুণ। আর, এতেই সন্দেহ দানা বাঁধে এলাকাবাসীর মধ্যে! খবর দেওয়া হয় খড়্গপুর লোকাল থানায়।
সোমবার বিকেলে গ্রামে পুলিশ গিয়ে প্রাথমিক তদন্তের পর তরুণ সিং-কে প্রথমে আটক ও পরে গ্রেফতার করে। আজ, মঙ্গলবার, পবিত্রা’র দেহ উদ্ধার করা হয় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে। তারপরই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। যদিও, গ্রামের আপামর পুরুষ মহিলা জানাচ্ছেন, দু’জনই নিজেদের স্বামী, স্ত্রী, পরিবার ও সন্তানদের ছেড়ে একসাথে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল। বছর ৪২ এর তরুণের স্ত্রী ও দুই ছেলে ভালুকমাচা গ্রামেই থাকে। পবিত্রা’র ক্ষেত্রেও তাই। তবে, প্রেমের টানে সেইসব তারা পরিত্যাগ করে মাসখানেকের জন্য বাইরে পালিয়ে গিয়েছিল। তারপর, ফিরে আসে গ্রামে। এরপরই, গ্রামের পাশেই কিছুটা জঙ্গল সংলগ্ন নিরিবিলি এলাকায় মাটি, বাঁশ দিয়ে ‘কুঁড়ে ঘর’ তৈরি করে বসবাস শুরু করে। তবে, কয়েক বছর পরই সঙ্গিনীর উপর অত্যাচার শুরু করে তরুণ। গ্রামবাসীরা একযোগে জানিয়েছেন, তাঁরাও সেইসব শারীরিক অত্যাচারের সাক্ষী আছেন। মদ্যপ অবস্থায় অকথ্য অত্যাচার চালানো হতো বলে অভিযোগ। আর এভাবেই সোমবারও মদ্যপ অবস্থায় অত্যাচার চালাতে গিয়েই তরুণ তার সঙ্গিনীকে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ। যদিও, স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশকে তরুণ জানিয়েছে, পবিত্রা অসুস্থ ছিল। তার মৃত্যু স্বাভাবিক। তবে, পুঁতে ফেলার কথা জেরায় ইতিমধ্যে সে স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে। ঘটনা ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, অতিরিক্ত মারধরের ফলে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল পবিত্রা’র। এদিকে, তরুণকে গ্রেফতার করে এদিন তোলা হয় খড়্গপুর মহকুমা আদালতে। তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে আদালতে আবেদন জানাচ্ছে পুলিশ। “তরুণ যদি খুন করে থাকে, শাস্তি হবে। আমাদের কিছু বলার নেই”, জানিয়েছেন তার বাবা ও স্ত্রী।