দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ ডিসেম্বর: অবৈধ সম্পর্ক। সহবাস। মিলনের মুহূর্তের ভিডিও গোপনে রেকর্ডিং! সেই ভিডিও’র ভয় দেখিয়ে ‘প্রেমিক’কে বারবার ‘ব্ল্যাকমেল’ করার অভিযোগ। অবশেষে, প্রেমিকের হাতে খুন! জেরায় খুনের কথা স্বীকার করে, ধৃত যুবক সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন তাঁদের সম্পর্ক আর তার ‘চরম পরিণতি’র কথাও। শুধু পুলিশের কাছে নয়, মহিলার বাপের বাড়ির সদস্যদের কাছেও যুবক স্বীকার করেছেন নিজের অপরাধের কথা। আপাতত পুলিশ ওই যুবককে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুরো ঘটনার ‘পুনর্নির্মাণ’ করছেন ঘটনাস্থলে গিয়ে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৬ নভেম্বর (বুধবার) দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের ভাদুতলা সংলগ্ন মুড়িগেড়্যার জঙ্গল থেকে এক মহিলার অর্ধনগ্ন ও অর্ধদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে শালবনী থানা। প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি নাম-পরিচয়। তবে, অস্বাভাবিক বা রহস্য মৃত্যুর আঁচ পাওয়া গিয়েছিল প্রথম থেকেই। প্রাথমিক তদন্তের পর বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর স্বতঃপ্রণোদিত খুনের মামলা রুজু করেছিল শালবনী থানা। মৃতদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। ঘটনার ৯ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর ওই মহিলার নাম, পরিচয় জানা যায়। তাঁকে সনাক্ত করে পরিবারের লোকজন।
দাসপুর থানা এলাকার বাসিন্দা বছর ২৮ এর ওই গৃহবধূ তাঁর বাপের বাড়ি গয়লাখালিতেই থাকতেন গত ৪ বছর ধরে। ৮ বছরের একটি ছেলেও আছে তাঁর। যদিও সে (ছেলেটি) থাকতো তার বাবার কাছেই। অপরদিকে, স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে গত চার বছর ধরে নিজের বাপের বাড়িতে এসেই ছিলেন রণিতা মান্না (নাম পরিবর্তিত) নামে ওই মহিলা (গৃহবধূ)। ডিভোর্সের মামলাও চলছিল বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা। এর মধ্যেই, ওই মহিলা নাকি একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ! বছরখানেক আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার বছর ৩০-এর যুবক বাপন শিকারী’র সঙ্গেও সম্পর্ক তৈরি হয় মহিলার (ওই গৃহবধূর)। মেদিনীপুর শহরে এসে তাঁরা প্রায়ই মিলিত হতেন বলেও জানা যায়। তেমনই কোনো এক সময়ে গোপন মুহূর্তের ভিডিও রেকর্ড করে নেন রণিতা মান্না (নাম পরিবর্তিত) নামে ওই মহিলা। এরপরই চলে প্রেমিককে ব্ল্যাকমেল করা, টাকা দাবি করা! গত ২৮ নভেম্বর, সোমবার, গড়বেতা থানার চন্দ্রকোনা রোড সংলগ্ন ডুকি এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্ত যুবক অর্থাৎ ‘খুন’ হওয়া মহিলার ‘প্রেমিক’ বাপন শিকারী নিজেই এই সমস্ত কথা স্বীকার করেছেন পুলিশি জেরার মুখে! জেলা পুলিশের একটি সূত্রে এও জানা যায়, যুবক ওই মহিলাকে বেশ কয়েকবার টাকা দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন। তবে, ক্রমশ টাকার অঙ্কটা বাড়তে থাকে বলেই গত ১৩ নভেম্বর (২০২২) শালবনীর ভাদুতলা সংলগ্ন মুড়াগেড়িয়ার জঙ্গলে মহিলাকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছেন বলে অকপটে স্বীকার করেছেন বাপন! শুধু তাই নয়, খুন করার পর, প্রমাণ লোপাটের জন্য রণিতা (নাম পরিবর্তিত)’র মুখমণ্ডলের অংশ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন বলে স্বীকার করেছেন বাপন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ নভেম্বর রাত্রি সাড়ে আটটা-ন’টা নাগাদ বাপন ভাদুতলা সংলগ্ন মুড়াগেড়িয়ার জঙ্গলে এই ঘটনাটি ঘটায়। তবে, খুন করার আগে একাধিকবার ভিডিও ডিলিট করার অনুরোধ করেন বাপন! এমনটাই পুলিশি জেরায় জানিয়েছেন তিনি। তা না করাতেই প্রেমিকার গলায় শক্ত তার পেঁচিয়ে খুন করেন বলে অভিযোগ। তারপর অ্যাসিড জাতীয় কিছু দিয়ে মুখমণ্ডলের অংশ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং মৃতদেহ ওই গভীর জঙ্গলে ফেলে রেখে চলে যান। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, পেশায় জেসিবি (JCB)’র ড্রাইভার বাপন শিকারী একসময় ভাদুতলা-পিড়াকাটা এই রাজ্য সড়কে কাজ করেছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। আর, সেজন্যই ওই জঙ্গল বা এলাকা তাঁর চেনা ছিল। তাই, মেদিনীপুর শহর থেকে রণিতা (নাম পরিবর্তিত)-কে টাকা দেওয়ার অছিলায় নিয়ে গিয়ে, প্রথমে মিলনে রত হন দু’জনে। তারপর বাপন শেষবারের জন্য ভিডিও ডিলিট করার অনুরোধ করেন! রাজি না হওয়াতেই, শেষমেশ ‘খুন’ করেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি। আপাতত তাঁকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে (২৯ নভেম্বর থেকে) নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে শালবনী থানা। গতকাল অর্থাৎ বুধবার (৩০ নভেম্বর), শালবনী থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল মৃত মহিলার পরিবারের সদস্যদের। বাপনের মুখোমুখিও করা হয়েছিল তাঁদের। এমনটাই জানিয়েছেন মৃতার বাবা। বাড়িতে (দাসপুরের গয়লাখালিতে) ফিরে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি দাবি করেছেন, “আমার বড় মেয়ে ছিল। জানিনা কি অপরাধ করেছে! তবে, যাই করুক না কেন, এভাবে খুন করে দেওয়াটা কি ঠিক হয়েছে? আমরা ওর (যুবকের) মৃত্যুদণ্ড চাইছি।”