দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ জুলাই: তাঁকে বাঁচাতে এসেই প্রাণ হারিয়েছিলেন স্বামী শ্যামাপদ বাগ (২৫), মা অনিমা মল্লিক (৪৫), মামা শ্যামল ভুঁইয়া (৪০) এবং মামিমা চন্দনা ভুঁইয়া (৩২)। কেশপুরের (পশ্চিম মেদিনীপুর) পঞ্চমীর মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আপনজনদের হারিয়ে, প্রথমে মেদিনীপুর মেডিক্যাল এবং পরে কলকাতার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন সদ্য-বিবাহিতা তরুণী অপর্ণা বাগ (১৯)। তবে, শনিবার গভীর রাতেই ‘নিষ্ঠুর’ পৃথিবী ছেড়ে স্বামী-মায়ের ‘কোলে’-ই আশ্রয় নিলেন কাশিগঞ্জের (ক্ষীরপাই পৌরসভার অন্তর্গত) ‘গৃহবধূ’ অপর্ণা! উল্লেখ্য যে, শুক্রবার মধ্যরাতের ভয়াবহ অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় অপর্ণার স্বামী, মা, মামা, মামিমা ছাড়াও প্রাণ হারিয়েছিলেন অ্যাম্বুলেন্স চালকের দুই সহকারী (জিৎ দোলই ও সুরজিৎ মাঝি)-ও। শনিবার ভোর রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা ৮ জনের মধ্যে ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ হয়েছিল গোটা জেলা! এবার চিকিৎসক ও সহৃদয় সকলের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে শনিবার গভীর রাতে কলকাতার পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন অপর্ণা-ও! ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় একমাত্র ‘জীবিত’ অ্যাম্বুলেন্স চালক অভিষেক মল্লিক এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে।

thebengalpost.net
দুমড়ে যাওয়া সেই অ্যাম্বুলেন্স:

প্রসঙ্গত, গভীর সঙ্কটজনক অবস্থায় অপর্ণা-কে শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা-র উদ্যোগে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পৌরপ্রধান সৌমেন খান সহ প্রশাসনের তরফেও। পিজি-র ট্রমা কেয়ারের আইসিইউ-তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন অপর্ণা। তবে, শেষ রক্ষা হয়নি! শনিবার গভির রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার সকালে জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “আমরা সব চেষ্টা করেছিলাম। পিজি-তে চিকিৎসাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পূর্বের শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার আঘাত, মাল্টি অর্গান ফেলিওরের মতো অবস্থাতেই ছিলেন বছর ১৯-র ওই তরুণী! সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শনিবার রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। আমাদের দল, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ওই পরিবারের পাশে আছেন, থাকবেন।” পিজি-তে ময়নাতদন্তের বিষয়েও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সুজয়।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যালে শনিবার সকালে:

এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, মাস দেড়েক আগেই ক্ষীরপাই পৌরসভার কাশিগঞ্জের শ্যামাপদ বাগের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ন্যাড়াদেউলের ভগবানচকের বাসিন্দা সদাগর মল্লিক ও অনিমা মল্লিকের মেয়ে অপর্ণা-র। গত কয়েকদিন আগে পেটে অসহ্য যন্ত্রণার কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয় ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে ২-৩ দিন চিকিৎসার পর কোনও উন্নতি না হওয়ায় শুক্রবারই স্থানান্তরিত করা হয় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। তবে, অবস্থার অবনতি হওয়ায়, রাতেই তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। ঘাটাল থেকে মেদিনীপুরে আসার পথে শুক্রবার মধ্যরাতে (রাত্রি ১২টা নাগাদ) সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিমেষের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়! অ্যাম্বুলেন্সে থাকা ৮ জনের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। ১ জনের মৃত্যু হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই। অপর্ণা একপ্রকার কোমায় চলে যান! বিভিন্ন সূত্রের দাবি, একহাতে চোট থাকা সত্ত্বেও কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছিলেন বছর ২৫-র যুবক অভিষেক মল্লিক। আর সেজন্যই হয়তো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের মুখোমুখি হয়ে পড়েছিল অ্যাম্বুলেন্স! প্রশ্ন উঠছে, সেজন্যই কি সঙ্গে দুই সহকারীকে রেখেছিলেন অভিষেক? যদিও, অনেকেই আবার ওভারটেকিং-র তত্ত্বও খাড়া করছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় যে একসঙ্গে পাঁচ-পাঁচটি পরিবার (অপর্ণার দুই পরিবার, মামার পরিবার, জিৎ ও সুরজিতের পরিবার) ‘নিঃস্ব’ হয়ে গেল, তা বলাই বাহুল্য!

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে অপর্ণা-কে রেফার করার সময়: