তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ মে: বারবার সচেতন করার পরেও টনক নড়ছে না বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের। মেয়েদের জন্য একাধিক সরকারি প্রকল্প বা বৃত্তির সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ১৮’র আগেই বিয়ে দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠছেন তাঁরা। মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই নিজেদের বিয়ে রুখে দেওয়া জেলার সাহসিনী নাবালিকাদের সংবর্ধনা দিয়ে ‘বাল্যবিবাহ’ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছিলেন স্বয়ং জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদরী। তারপরেও একের পর এক বাল্যবিবাহের তোড়জোড় অবাক করছে জেলাবাসীকে! সপ্তাহখানেক আগেই গায়ে হলুদ হয়ে যাওয়া নাবালিকার বিয়ে ভেস্তে দিয়েছিলেন চন্দ্রকোনা ১ নং ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী। মঙ্গলবারও এক নাবালিকার বিয়ে রুখতে সক্ষম হলেন তিনি। তবে, এবার সেই নাবালিকাই নিজের ‘বার্তা’ অডিও রেকর্ড করে পৌঁছে দিলেন বিডিও’র কাছে!

thebengalpost.net
দিতে হল মুচলেকা:

মঙ্গলবারের ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার মাড় মহেশপুর গ্রামের। জানা যায়, মাড় গোপালপুর সিন্দুবালা হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী বছর ১৬’র বর্ষা কোলে-কে কার্যত জোর করে বিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন। মঙ্গলবার ছিল সেই বিয়ের দিন। বিয়েতে নারাজ নাবালিকা অডিও রেকর্ড করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জনৈক বন্ধুকে এই বিয়ে বন্ধের আর্জি জানায়। সেই করুণ আর্তি পৌঁছে যায় চন্দ্রকোনা ১ নং ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারীর কাছে। বিষয়টি জানার পরই বিয়ে বন্ধ করতে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা মঙ্গলবার মাড় মহেশপুরে আশিস কোলের বাড়িতে হাজির হন। ব্লক প্রশাসনের তরফে বারবার বোঝানো হয় নাবালিকা বিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা মেয়ের (বর্ষা)’র সাথে কথা বলতে চাইলে, অভিভাবকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মেয়ের বাবা-মা সহ আত্মীয়রা বলতে থাকেন, “মেয়ে বাড়িতে নেই। আর, কোন বিয়ে বাড়িও হচ্ছে না।” ব্লক প্রশাসনের তরফে সুস্মিতা বসাক ও সন্দীপ দাস বলেন, “নাবালিকার অভিভাবকরা আমাদের সাথে কোনরকম সহযোগিতা না করে, আমাদের রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিতে থাকেন। তাঁরা বলেন আমাদের মেয়ের সাথে কথা বলার আগে আমাদের সাথে কথা বলুন। আপনাদের কোন অধিকার নেই আমাদের এইভাবে অপমান করার। আমরা তখন বলি আপনার মেয়ে যখন অভিযোগ করছে তখন আমাদের কথা বলতে দিন মেয়ের সাথে।” পরে অবশ্য আধিকারিকদের চাপে পরিবারের সদস্যরা মুচলেকা দেন। যদিও, এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ওই নাবালিকাকে আত্মীয় বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে!