দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১ সেপ্টেম্বর: খড়্গপুরের গোলবাজারে রবীন্দ্র ইনস্টিটিউট হলে সভা চলছিল সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের। রাজ্য সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে গরমাগরম বক্তৃতা দিচ্ছিলেন দিলীপ। হঠাৎ একটু পেছনের দিকে আওয়াজ উঠলো- “এই তো খুঁজে পেয়েছি!” তারপরই দেখা যায়, এক মহিলাকে ধরে মারতে মারতে বের করে আনছেন আরও ৩-৪ জন মহিলা। তারপর রীতিমতো কোমরে দড়ি বেঁধে গোলবাজার থেকে গাড়িতে করে চৌরঙ্গীর মোড়ে নামকরা এক হোটেলে নিয়ে গিয়ে, বাথরুমে ঢুকিয়ে, দরজা লাগিয়ে দেন তাঁরা! বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে রেলশহর খড়্গপুরে। শহরের গোলবাজারের ওই প্রেক্ষাগৃহে দিলীপ ঘোষের বক্তৃতা চলাকালীন-ই ঘটনাটি ঘটে! খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ ওই মহিলা-কে উদ্ধার করে এবং হোটেলের মালিকপক্ষের একজন সহ ৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। জানা যায়, শেফালী রায় নামে ওই মহিলা রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করেছিলেন, তাঁর সংগঠনেরই অন্যান্য অনেকের সঙ্গে। তার জেরেই এ দিনের ঘটনা বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুরের গোলবাজারের রবীন্দ্র ইনস্টিটিউট হলে বিজেপির শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় রেলওয়ে মালগুদাম শ্রমিক সংঘের সম্মিলনী অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগ দিতে আসেন সদস্যরা। মালদা থেকে যোগ দিতে আসেন বছর পঞ্চাশের শেফালী রায় নামে সংগঠনের এক সদস্যা। ওই অনুষ্ঠানে দিলীপ ঘোষ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন প্রতারিতরা দেখে নেন শেফালী রায় নামে ওই মহিলা-কে। তারপরই অনুষ্ঠান চলাকালীন তাঁকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে, মারধর করে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতারিতরা বলেন, “শেফালী রায়কে আমরা টাকা দিয়েছিলাম রেলের চাকরির জন্য। চাকরি হয়নি। বারবার তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি আমাদের সাথে কোন সহযোগিতা করেননি। বহুদিন পর আজ তাঁকে এই অনুষ্ঠানে দেখতে পাই!” এই বিষয়ে দিলীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সংগঠনের নেতাদের জিজ্ঞাসা করতে। ইউনিয়নের নেতারা কিছু না বলেই চলে যান। এদিকে, মহিলাকে মারধর করে, খড়্গপুর লোকাল থানার অন্তর্গত চৌরঙ্গী এলাকায় একটি বেসরকারি হোটেলের বাথরুমে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশ পৌঁছে মহিলাকে বাথরুম থেকে উদ্ধার করে। ঘটনার জেরে, হোটেলের মালিক (বা, তাঁর ছেলে) সহ সংগঠনের যাঁরা মহিলাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত, তাঁদের আটক করে টাউন থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এদিকে, এই ঘটনায় বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করে জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “একেই বলে চোরের মায়ের বড় গলা! বিজেপি মানেই দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি। তারা আবার রাজ্যের বিরুদ্ধে ফড়ফড় করে। বিজেপি’র দৌলতে অত্যন্ত নিন্দনীয় এক ঘটনা দেখলেন খড়্গপুরবাসী।”