তনুপ ঘোষ ও দেবনাথ মাইতি, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ সেপ্টেম্বর: ক্ষীরপাই থেকে খড়্গপুর- পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে সেল্ফ হেল্প গ্রুপ বা স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর (Self Help Groups) লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠছে গ্রুপেরই দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলাদের বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের ১০ থেকে ১৫-টি স্ব-নির্ভর মহিলা গোষ্ঠীর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল গোষ্ঠীর-ই এক মহিলা সদস্যার বিরুদ্ধে। সবিতা সমাদ্দার নামে ওই মহিলা ৬ নং ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা বলে জানা গেছে। জানা যায়, খড়্গপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভবানীপুর এলাকা থেকে মাঠপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৬৬-টি স্ব-নির্ভর মহিলা গোষ্ঠী রয়েছে। এই ৬৬-টি মহিলা গোষ্ঠীর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ টি মহিলা গোষ্ঠীর টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে সবিতা সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সবিতা সমাদ্দারের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, বিগত কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক লোন নেওয়া টাকার ইন্টারেস্ট বা সুদ মাসে মাসে তাঁদের কাছ থেকে নিয়ে গেলেও, ব্যাংকে জমা না দিয়ে, ব্যাংকের জাল রশিদ তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কের স্ট্যাম্প জাল করে সবিতা এভাবেই প্রতারণা করেছেন বলে জানা গেছে। কয়েকদিন আগে তাঁরা জানতে পারেন যে, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার জন্য তাঁরা সবিতা সমাদ্দারকে যে টাকা দিয়েছিলেন, সেই টাকা তিনি আদৌ ব্যাংকে জমা করেন নি! এমনকি তাঁদের নামে আসা লোনের টাকাও সবিতা সমাদ্দার সই জাল করে তুলে নিয়েছেন।
ছয় নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা খড়্গপুর পৌরসভার পৌরপ্রধান প্রদীপ সরকার এবং স্থানীয় স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা বৈশাখী বসাকের উপস্থিতিতে গত ৩১ আগস্ট ওই মহিলার দুর্নীতি বা প্রতারণা তাঁরা ধরে ফেলেন। এরপরই, পৌরপ্রধান প্রদীপ সরকারের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সবিতা সমাদ্দার তাঁদের টাকা আস্তে আস্তে করে শোধ করবেন। কিন্তু, দেখা যায় ১ সেপ্টেম্বর থেকেই সবিতা সমাদ্দার তাঁর বাড়িতে নেই। লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে পলাতক সবিতা! এই পরিস্থিতিতে চরম সমস্যায় পড়েছেন মহিলারা। তাই, আন্দোলন করে শনিবার তাঁরা অবিলম্বে সবিতা সমাদ্দার-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ঠিক একইভাবে, তৃণমূল পরিচালিত ক্ষীরপাই পৌরসভাতেও স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠলো অঞ্জলি দাস নামে গোষ্ঠীর এক মহিলা কর্মী বা কমিউনিটি অর্গানাইজারের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে শনিবার পড়লো পোস্টার। ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেল্ফ হেল্প গ্রুপের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, এই অভিযোগে কমিউনিটি অর্গানাইজার বা সিও অঞ্জলি দাসের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল। জানা যায়, পৌরসভার স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর ওয়ার্ড পিছু আর.ও (রিসোর্স অর্গানাইজার)-দের উৎসাহ ভাতা দেওয়া হয় সরকারের তরফে। সেই উৎসাহ ভাতা এককালীন পৌরসভার তহবিলে আসে। সেই তহবিল থেকে ওই টাকা পৌরসভার অধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডের আর.ও (রিসোর্স অর্গানাইজার)- দের দেওয়া হয়। অভিযোগ, ক্ষীরপাই পৌরসভার ১০ টি ওয়ার্ডের ১০ জন আর.ও -দের প্রাপ্য টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে না দিয়ে, নগদে লেনদেন চলত। আর, নগদে লেনদেন হওয়ার ফলে আর.ও দের প্রাপ্য টাকার চেয়ে কম টাকা দেওয়া হতো বছরের পর বছর ধরে। এভাবেই, আর.ও-দের প্রধান অর্থাৎ সি.ও (কমিউনিটি অর্গানাইজার)’র বিরুদ্ধে প্রতারণা বা জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আর.ও বলেছেন, বেশিরভাগ টাকাটাই নগদে দেওয়া হতো। দু’একবার অবশ্য ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়েছেন তাঁরা। বিরোধী দল বিজেপি ও সিপিআইএম-এর অভিযোগ তৃণমূল দল সারা রাজ্যে দুর্নীতির সাথে যুক্ত। দুর্নীতি কেউ একা করেনি। সিও.কে এই প্রতারণায় মদত দেওয়া হতো। সেই টাকা সকলেই ভাগ নিত। যদিও সিও অঞ্জলি দাস বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই মিথ্যা। যাদের টাকা তাঁরা নিজেরাই ভাগ করে নিত। এখানে কোনভাবেই আমি জড়িত নই। এদিকে, পোস্টারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে ক্ষীরপাই পৌরসভার চেয়ারম্যান দুর্গাশঙ্কর পান বলেন, “রাতের অন্ধকারে পোস্টার দেওয়ার আগে, বিষয়টি আমাদের জানাতে পারতো। কিন্তু, তারা আমাদের কিছু জানায়নি। তবুও, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।” তদন্তের দাবি তুলেছেন বিরোধীরাও।