দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ মার্চ: টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে নেহাতই কৌতুহলবশত একটি গাছের তলা থেকে কিছু শুকনো ফল হাতে তুলে নিয়েছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন পড়ুয়া। তারপর তা ছাড়াতে ছাড়াতে বেরিয়ে আসে বাদামের মতো সাদা অংশ। শিশু সুলভ উৎসাহতেই তা খেয়ে দেখে কয়েকজন শিশু। খেতে বাদামেরই মতো! তা শুনে বাকিরাও খায়। শিশুরা ওই ফল কুড়িয়ে নিয়ে যায় নিজেদের বাড়িতে। মা’কে বলে ‘খেয়ে দেখ বাদামের মতো খেতে!” তা শুনে দু’জন মহিলাও (দুই শিশুর মা) তা খেয়ে দেখেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের জগন্নাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দুরিয়া (রাধাবল্লভপুর সংলগ্ন) গ্রামে। এদিকে, ওই ফল খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিক্রিয়া! অসহ্য বমি এবং পেটের যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে কয়েকজন শিশু। ২-৩ জন আবার স্কুলে যায়। স্কুলে যাওয়ার পরই তাদেরও বমি ও পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়।
এরপর, স্কুলের তরফে অ্যাম্বুলেন্সে খবর দেওয়া হয়। নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। ততক্ষণে বাকি শিশু এবং দুই মহিলাও বমি ও পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছয়। জানাজানি হয় গ্রামে। ঝুঁকি না নিয়ে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালের তরফে দুপুরেই তাদের স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। খবর পৌঁছয় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরেও। চিকিৎসা শুরু হয় শিশুদের। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফেও। খোঁজখবর নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকারিকেরা জানতে পারেন, শুকনো ভেরেন্ডা বা জ্যাট্রোফা (Jatropha) ফলকেই বাদাম মনে করে শিশুরা খেয়েছিল। গ্রামীণ ভাষায় এই ফলকে ভেড়রা বা ভেড়েরা ফল বলা হয়। তা যে খেতে নেই, তা ওই শিশুরা জানতোনা। বাড়ির বড়রাও না বুঝেই তা খেয়ে নিয়েছিলেন! আর, এ ফলেই এই কাণ্ড ঘটে। তবে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরই ৭ শিউ সহ ৯ জনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হয়। রাতে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানান, “৪ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৭ জন শিশু এবং বছর ৩০-এর দুই মহিলা বমি ও পেটের যন্ত্রণার উপসর্গ নিয়ে দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তদন্ত করে আমরা জানতে পারি, জ্যাট্রোফা ফল খাওয়ার ফলে এমনটা ঘটেছিল। এই মুহূর্তে প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থার স্থিতিশীল। বিপদ কেটে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।” শুক্রবার সকালেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৯ জনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। হয়তো আজ বা আগামীকাল তাদের ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।