দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ মার্চ:আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বেআইনিভাবে জমি দখল এবং নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার মারাত্মক অভিযোগ পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহরে। শহরের রাঙামাটি সংলগ্ন বৈশাখী পল্লিতে এই ঘটনা ঘটেছে। মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র, বর্তমানে লন্ডনবাসী সমীর দাসের অভিযোগ, তাঁর ছোট ভাই সুব্রত দাস বেআইনিভাবে তাঁদের পৈতৃক জমি বিক্রি করে দিয়েছেন স্থানীয় এক প্রোমোটারকে ৷ এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন তিনি এবং তাঁর দুবাইবাসী আরেক ভাই শ্যামল দাস ৷ সেই মামলার ভিত্তিতে আদালত ওই জমিতে যে কোনোরকম নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু, সেই নির্দেশ অমান্য করেই তাঁদের জমিতে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে শাসকদল ঘনিষ্ঠ এক প্রোমোটার। ওই প্রোমোটারকেই অবৈধভাবে জমি বিক্রি করা হয়েছিল বলে সমীর দাসের অভিযোগ। কিন্তু, আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে তিনি কিভাবে নির্মাণ কাজ চালাতে পারেন, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যে, সমীর ও তাঁর আরেক ভাই শ্যামল দাস, প্রশাসনের কাছে মেল মারফত অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে, ঘটনায় এখনও নীরব পুলিশ প্রশাসন।
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চলছে অবৈধ নির্মাণ। নির্বিকার জেলা পুলিশ প্রশাসন। এমনটাই অভিযোগ একসময় মেদিনীপুরের রাঙ্গামাটির বৈশাখীপল্লী এলাকায় বসবাসকারী সমীর দাস ও শ্যামল দাস নামে দুই ভাইয়ের। বর্তমানে, তাঁরা যথাক্রমে লন্ডন ও দুবাইতে থাকেন। তবে, মাঝেমধ্যেই দেশে অর্থাৎ মেদিনীপুরে নিজেদের বাড়িতে আসেন। কিন্তু, ২০১৩ সালে বড়সড় গন্ডগোল বাধে তারই আরেক ভাই সুব্রত দাসের সঙ্গে। অভিযোগ, রাতারাতি এলাকার দুই তৃণমূল নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁদের বৈধ বাড়িঘর কাউকে না জানিয়ে অবৈধ ভাবে বিক্রি করা শুরু হয়। প্রতিবাদ জানান, প্রবাসী সমীর ও শ্যামল। এরপর তা আদালত অবধি গড়ায়। দুই ভাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েনের শরণাপন্ন হন বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি, তাঁদের ভিটেমাটি ছাড়াও পাশের কয়েক ডেসিমেল ফাঁকা জায়গায় একটি বিকলাঙ্গদের সেন্টার গড়ার জন্য প্রবাসী দুই ভাই তোড়জোড় শুরু করেন। সেখানে বিকলাঙ্গদের যেমন ট্রিটমেন্ট হবে, তেমনই যাতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়, সেই দিকে নজর দিয়ে একটি এনজিওর সঙ্গে কথা বলেন দুই ভাই। সেই উদ্দেশ্যেই তাঁরা নিজেদের জায়গা দেখার জন্য মেদিনীপুরে এলে দেখেন, তাদের ওই জায়গা দুই তৃণমূল নেতা ও তাঁদের সাঙ্গপাঙ্গরা রাতের অন্ধকারে দখল করার চেষ্টা করছে।
এমনকি পুরানো বাড়িটি মেশিন দিয়ে ভেঙে ফেলার কাজ যেমন চলছে। অপরদিকে চলছে নতুন কনস্ট্রাকশনের কাজ।এরপর সমীর বাবু দ্বারস্থ হন পুলিশের কাছে এবং আদালতের কাছে। মেদিনীপুর আদালত আবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয় আদালত। তবে, আদালত সমস্ত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার পরেও অভিযুক্ত সুজয় মাইতি নামে শাসকদল ঘনিষ্ঠ ওই প্রোমোটার নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, অভিযুক্ত সুজয় মাইতি আদালতে পাল্টা আবেদন জানান স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য। কিন্তু, সেই আবেদন অগ্রাহ্য করে আদালত। সুজয় মাইতিকে সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে আগামী ৩১ শে মার্চ আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। একইসাথে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশও বহাল রাখা হয়। তা সত্বেও প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সুজয় মাইতি ও সঞ্জন মাইতি নামে দুই ব্যবসায়ী। লন্ডন প্রবাসী সমীর দাসের আরও অভিযোগ, তাঁর বাড়ি ভেঙে, বাড়ির মধ্যে থাকা সমস্ত আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী (যার মূল্য আনুমানিক ১৭ লক্ষ টাকা) বের করে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা শুক্রবার ছবি তুলতে গেলে তাঁদের বাধাও দেওয়া হয়। এই অবস্থায় লন্ডন প্রবাসী সমীরবাবু ইমেইল মারফত জেলা পুলিশ ও নবান্নে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।