দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ মার্চ: এ যেন বিনা মেঘে বাজ পড়লো দরিদ্র, খেটে খাওয়া পরিবারে! মাত্র ৫ মিনিট আগেও সব ঠিকঠাকই ছিল। এক গৃহবধূ কাজ থেকে ফিরে, স্নান করে সবেমাত্র বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন। অপরজন খাওয়াদাওয়া করে বসেছিলেন। বাড়িতেই ছিলেন তাঁদের স্বামীরাও। তবে, তাঁদের ছেলেমেয়েরা বৃষ্টি শুরুর আগেই পাশের বাড়িতে গিয়েছিল খেলাধুলা করতে। সবেমাত্র বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই হঠাৎ আলোর ঝলকানি, তারপরই বাজ পড়ার সেই ভয়াল শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক চিলতে ঘরে লুটিয়ে পড়েন চার জনই। কয়েক মিনিটের মধ্যেই অবশ্য জ্ঞান ফিরে আসে দুই ভাইয়ের। তবে, দুই গৃহবধূই (দুই ভাইয়ের স্ত্রী’ই) অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকেন। দ্রুত পাশাপাশি বাড়ির লোকজনদের ডাকাডাকি করে, তাঁদের উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণের মধ্যেই অষ্টমী সিং নামে বছর ২৬-এর গৃহবধূকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। যপ সিং নামে বছর ২৮-এর অপর গৃহবধূ এই মুহূর্তে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই চিকিৎসাধীন। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের কর্ণগড় সংলগ্ন বাজারপাড়া গ্রামে।

thebengalpost.net
অষ্টমী’র স্বামী শম্ভু সিং সহ শোকাহত পরিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে:

জানা যায়, ছোটো একচালা মাটির বাড়ির পাশেই বাঁশবন। সেখানেই একটি বড় বাঁশ গাছে বাজ পড়ে বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। বাজের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, ঘরের মধ্যে থাকা চারজনই অজ্ঞান হয়ে যান। শম্ভু সিং ও মঙ্গল সিং নামে দুই ভাইয়ের জ্ঞান ফিরলেও, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় দুই গৃহবধূকে। সেখানেই মৃত্যু হয় অষ্টমী সিং নামে বছর ২৬’র ওই গৃহবধূর। রবিবার সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে দাঁড়িয়ে অষ্টমী’র শোকাহত স্বামী শম্ভু সিং জানান, তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। দু’জনই নাবালক। এই ঘটনায় কিভাবে তাদের মানুষ করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। অন্য ভাই মঙ্গল সিং এবং যপ সিং এর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেমেয়েরা সকলেই সেই মুহূর্তে (বাজ পড়ার সময়) বাড়ির বাইরে ছিল বলেই রক্ষা! নাহলে যে আরো বড় বিপদ হতে পারতো, তা মানছেন সকলেই। এদিকে, মর্মান্তিক এই ঘটনায় দরিদ্র ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন থেকে জনপ্রতিনিধিরা। বজ্রপাতে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাপ্য ২ লক্ষ টাকাও দ্রুত ওই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ সিংহ জানিয়েছেন।