দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ নভেম্বর: বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ এবং চাপ দিয়ে গর্ভপাত করানোর অভিযোগ করেছিলেন প্রেমিকের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার মীমাংসা করে দেওয়ার সুযোগ নিয়ে, স্থানীয় কাউন্সিলর নির্যাতিতা তরুণীকে নিজের পার্টি অফিসে ডেকে অভিযুক্ত প্রেমিক এবং আরও একজনকে সঙ্গে নিয়ে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ! ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রেলশহর খড়্গপুরে। মাস তিনেক আগেই (জুলাই, ২০২২) নির্যাতিতা তরুণী’র সঙ্গে এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেলেও, প্রাণের ভয়ে ও আতঙ্কে এতদিন তিনি মুখ খোলেননি! এমনকি নিজের বাড়ি থেকেও বেরোননি! কাউন্সিলরের তরফে হুমকি দেওয়া আছে, “মুখ খুললেই গুলি করে খুন করে, লাস গুম করে দেব!” ৩২ নং ওয়ার্ডের অভিযুক্ত ওই কাউন্সিলেরের নাম মুকেশ হুমনে। আর, নির্যাতিতার সেই প্রেমিকের নাম অলোক কুমার। তাঁদের সঙ্গে এস. অরবিন্দ রাও নামে আরও এক যুবক ছিলেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, বছর পাঁচেক আগে স্বামীকে হারানো ওই তরুণী খড়্গপুরে নিজের বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে অলোক কুমারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে আলোকের বিরুদ্ধে তরুণী অভিযোগ আনেন। অভিযোগ, চাপ দিয়ে গর্ভপাত করানোরও। এদিকে, বিজেপি থেকে জিতে গত মে মাস (২০২২) নাগাদ তৃণমূলে আসা স্থানীয় কাউন্সিলর মুকেশ হুমনে ঘটনার কথা জানতে পেরে মীমাংসা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তারপর, গত ২৫ জুলাই দুপুর তিনটা নাগাদ বড় আয়মার পার্টি অফিসে ডেকে তিনজনে মিলে (অলোক কুমার ও অরবিন্দ রাওকে সঙ্গে নিয়ে) তরুণীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। পরবর্তী সময়ে এই বিষয়ে টাউন থানায় এফ আই আর (FIR) করলে পুলিশ নির্যাতিতার প্রেমিককে গ্রেফতার করলেও, মুকেশ ও অরবিন্দ রাও-কে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ। গত তিন মাস চুপচাপ হুমকি শুনে যাওয়ার পর, অবশেষে ওই নির্যাতিতা তরুণী সমস্ত ঘটনার কথা লিপিবদ্ধ করে SP, Adl SP, SDPO- কে চিঠি দেন গত ২১ অক্টোবর। চিঠিতে অবিলম্বে মুকেশের গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন নির্যাতিতা। তাঁর বক্তব্য, মুকেশ ও তাঁর বন্ধুর ভয়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেননা! তাঁরা খুনের হুমকি দিচ্ছেন বারেবারে। এর বিরুদ্ধে যেন যথাযথ পদক্ষেপ করা হয়। ঘটনা ঘিরে রেলশহরে ছড়িয়ে পড়েছে চাঞ্চল্য!
এদিকে, ঘটনার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন ৩২ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মুকেশ হুমনে। তিনি জানিয়েছেন, “ওদের একটা সম্পর্ক ছিল। তাতে কিছু ঝামেলা হয় বলে, ওই মহিলা নিজে থেকেই আমার অফিসে এসেছিলেন সমস্যা সমাধানের আবেদন নিয়ে। আমি বলি, আপনি যখন দুই সন্তানকে নিয়ে সমস্যায় আছেন, আর ছেলেটি (অলোক কুমার) সম্পর্কের কথা অস্বীকার করছে, আপনি একজন ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নিন। ব্যস এটুকুই! তারপর শুনছি আমার নামেও ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। কি বলব! অসহায় মহিলা বলে কথা বলেছিলাম। কাউন্সিলর হয়ে এরকম হাজারো সমস্যা আসে, সমাধান করতে হয় আমাদের।” অন্যদিকে, এই ঘটনায় কাউন্সিলরকে তীব্র আক্রমণ করে জেলা বিজেপি’র মুখপাত্র অরূপ দাস জানিয়েছেন, “আগে বিজেপিতে ছিল, তাই নৈতিক চরিত্র ঠিক ছিল বা এরকম কাণ্ডকারখানা করার সাহস হয়নি। এখন তৃণমূলে গেছে, ওদের যা চরিত্র তাই করেছে! অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমরা বরং জেলা পুলিশকে বলব, অবিলম্বে ওই নির্যাতিতা মহিলার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। তারপর যা করার করবেন!” জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “বিজেপি কাউন্সিলর না তৃণমূলের কাউন্সিলর না অন্য কোনো দল, দেখার প্রয়োজন নেই; পুলিশ যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন। আমাদের দল এসব বরদাস্ত করেনি, করবেনা। তবে, দ্রুত ও সঠিকভাবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আর, নির্যাতিতার নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশকে দেখতে হবে।”