দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ সেপ্টেম্বর:’স্বচ্ছ ভারত’ আর ‘নির্মল বাংলা’ কি শুধুই প্রচারে? চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান কি কেবল খাতায় কলমে? উঠছে প্রশ্ন! ওঠাটাই স্বাভাবিক। এখনও কেন গ্রামের সুরভী, মাধুরী (নাম কাল্পনিক)-দের শৌচকর্ম করতে মাঠে যেতে হবে? এখনও কেন গ্রামে গ্রামে চোলাই ভাটির রমরমা হবে? কেনই বা মদ্যপদের দাপটে গ্রামের মেয়ে-বউদের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হবে? প্রশ্নগুলো সামনে আসে, যখনই ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে! তারপর ফের হয়তো মিলিয়ে যায়। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরাও থাকেন নীরব! গত বৃহস্পতিবার (অনেকেই বলেন লক্ষ্মীবার) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার অন্তর্গত পাথরতোড়া এলাকায় ১৩ বছরের ছোট্ট ‘লক্ষ্মী’ (নাম কাল্পনিক)-কে ধর্ষিত হতে হল ৫ মদ্যপের হাতে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই মাঠে শৌচকর্ম করতে গিয়ে মদ্যপদের পাল্লায় পড়ে সে। এক নাবালক সহ ৫ মদ্যপ তাকে আরও দূরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ঘটনায় জড়িত পাঁচ অভিযুক্তকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারমধ্যে একজন আবার নাবালক। বর্তমানে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে নাবালিকা।

thebengalpost.net
গড়বেতা :

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি ফাঁকা মাঠে শৌচকর্ম করতে গিয়েছিল ওই নাবালিকা। সেই সময় মাঠের কাছেই বসে মদ্যপান করছিল ওই এলাকার পাঁচ যুবক। তাদের মধ্যে একজন আবার নাবালক। অভিযোগ, নাবালিকাকে ফাঁকা জায়গায় একা পেয়ে তুলে নিয়ে যায় পাঁচ যুবক। নাবালিকা যাতে চিৎকার করতে না পারে তার জন্য তার মুখ চেপে ধরা হয়। এরপর নিকটবর্তী একটি পাথর খাদানের কাছে নিয়ে গিয়ে পাঁচজন মিলে ধর্ষণ করে নাবালিকাকে। তারপর, তাকে সেখানেই ফেলে পালিয়ে যায় তারা। এরপর সেখান থেকে কোনও রকমে বাড়ি ফেরে ওই নাবালিকা। লজ্জায় বাড়িতে কিছুই জানায়নি সে। পরেরদিন সকালে অসুস্থ হয়ে পড়ে নাবালিকা। তারপর বাড়ির লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, কান্নায় ভেঙে পড়ে সে! সমস্ত ঘটনা খুলে বলে পরিবারের সদস্যদের। ধর্ষকদের মধ্যে দু’জনকে ওই নাবালিকা চিনতে পারলেও বাকি তিনজনকে চিনতে পারেনি সে। এরপর নাবালিকাকে নিয়ে গড়বেতা থানার দ্বারস্থ হয় তার পরিবার। লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নাবালিকাকে। ঘটনার তদন্তে নেমে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে গড়বেতা থানার পুলিশ। শনিবার মেদিনীপুর আদালতে তোলা হয় পাঁচজনকে। তারমধ্যে চারজনকে পকসো কোর্টে এবং ওই নাবালককে জুভেনাইল কোর্টে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী স্বর্নেন্দু পারিয়াল বলেন, পাঁচ ধৃতকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গড়বেতার পাথরতোড়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রচুর চোলাইয়ের ভাটি রয়েছে। অল্প বয়সেই মদের মারণ-নেশায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে যুবসমাজ। তারাই এইসব অপকর্ম ঘটাচ্ছে। অন্যদিকে, গত কয়েক মাসে যেভাবে একের পর এক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে, তাতে নারী-নিরাপত্তাও প্রশ্ন-চিহ্নের মুখে!