দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ এপ্রিল: অবশেষে ধরায় ধরা দিল সে! এলো বহু প্রতীক্ষিত কালবৈশাখী। উপরি পাওনা শিলাবৃষ্টি! বহু বছর এমন শিলাবৃষ্টি দেখেনি শহর মেদিনীপুর। নেট দুনিয়ায় জানাচ্ছেন তরুণ-তরুণী থেকে বয়স্করাও। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা-সাড়ে চারটা নাগাদ জেলা শহর মেদিনীপুর সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে শুরু হয় বৃষ্টি। দু-একটি জায়গা ছাড়া, জেলার প্রায় সর্বত্র হয় শিলাবৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া আর মুহুর্মুহু বজ্রপাত। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, পূর্ব মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তেও বৃহস্পতিবার ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। একদিকে, পাঁশকুড়া-হাউর অন্যদিকে ঝাড়গ্রাম-মানিকপাড়াতে বড় বড় বরফের মতো শিল পড়ে। মেদিনীপুর শহর সহ কেশপুর, শালবনী সহ বিভিন্ন এলাকাতেও শিল (বা, শিলা) পড়ে। যার জেরে মাঠের ফসল তথা সবজিরও বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষকরা। এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া উদ্যান জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৭-টা পর্যন্ত মেদিনীপুর শহর সহ সংলগ্ন এলাকায় ৭০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তীব্র দাবদাহের পর যা নিঃসন্দেহে স্বস্তি নিয়ে এসেছে জেলা জুড়ে। একধাক্কায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গেছে যথাক্রমে ৪ ও ৬ ডিগ্রি!
অন্যদিকে, শিলাবৃষ্টির আনন্দের সঙ্গেই বজ্রপাতের নির্মমতায় মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। আহত আরও ৪ জন। ঝাড়গ্রামেও (সরডিহা অঞ্চলে) বাজ পড়ে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার যাদবনগর এলাকায় মাঠে কাজ করার সময় বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় তাপস পাতর (৩৩) নামে এক যুবকের। অন্যদিকে, শালবনী ব্লকের ভাদুতলা সংলগ্ন বাগমারি এলাকায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয় স্বপন ভুইঁয়া নামে বছর ৪২-এর এক যুবকের। তিনিও মাঠে কাজ করছিলেন। এলাকার পরোপকারী যুবক হিসেবে পরিচিত স্বপন ব্যবসা ও চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্ত্রী ছাড়াও বছর ১৩-১৪’র এক নাবালিকা মেয়ে আছে তাঁর। ঘটনা ঘিরে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া! এছাড়াও, কোতোয়ালি থানার শিরোমনির সিমলাডাঙ্গা এলাকায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয় বৈদ্যনাথ সরেন (৫৫) নামে এক প্রৌঢ়ের। এই ঘটনায় বাকি দু’জন মনিরুল ইসলাম ও শেখ রকিমুদ্দিন আহত অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা সকলেই মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে, চন্দ্রকোনা থানার নীলগঞ্জ এলাকায় বাজ পড়ে জখম হন সম্বরী হেমব্রম (৩৮)। তিনি ছাগল চরিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কেশপুরের আঙ্গুয়া এলাকায় বাজে পড়ে জখম হন মামনি ঘোষ (১৮) নামে এক তরুণী। বর্তমানে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিকেলের পর মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সারা রাজ্যে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সন্ধ্যা নাগাদ জানা গেছে বিশ্বস্ত সূত্রে।