মণিরাজ ঘোষ ও শশাঙ্ক প্রধান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে সোজা পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে ধর্মা, হোসনাবাদ, মোহনপুর, চৌরঙ্গী, ডেবরা হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় রওনা দেয় পাঁশকুড়ার উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে ৬০নং জাতীয় সড়কের হোসনাবাদ এবং ৬নং জাতীয় সড়কের উপর ডেবরাতে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ডেবরা সহ মেদিনীপুর জেলার অসংখ্যা নেতাকর্মী-সমর্থকেরা। তবে, তাঁদের উদ্দেশ্যে কেবশ হাত নেড়েই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় জাতীয় সড়ক ধরে সোজা রওনা দেয় পাঁশকুড়ার উদ্দেশ্যে। ডেবরার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন নিয়ে জল্পনা চললেও, মুখ্যমন্ত্রী এদিন সোজা পাঁশকুড়াতে চলে যান।
বন্যা বিধ্বস্ত পাঁশকুড়ার পরিস্থিতি দেখে DVC-র উপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি DVC-র সঙ্গে ‘সব সম্পর্ক’ ছিন্ন করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মেদিনীপুরের অবস্থা দেখে আমি শঙ্কিত! পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, কেশপুর, ডেবরা আর পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, হুগলির আরামবাগ, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা সহ এই বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গিয়েছে ডিভিসি-র ছাড়া জলে। ঝাড়খন্ডকে রক্ষা করতে, সম্পূর্ণ চক্রান্ত করে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাকে ডোবানো হয়েছে। গতকাল রাতেও জল ছাড়া হয়েছে! সেজন্যই পাঁশকুড়ার অবস্থা আজ সকাল থেকে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সবমিলিয়ে DVC প্রায় ৪ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ল! গালুডি, পাঞ্চেত থেকে আরও দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ছে। মোট সাড়ে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে। এত জল কখনও ছাড়া হয়নি। এভাবে বাংলাকে ডোবাতে থাকলে ভবিষ্যতে আমরা DVC-র সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক রাখব কিনা ভাবতে হবে! আমরা সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেব ভাবছি।”
উল্লেখ্য যে, দুই মেদিনীপুরের মধ্যে ঘাটাল ও পাঁশকুড়ার অবস্থাই এবার সবথেকে ভয়াবহ। তবে, ডেবরা (লোয়াদা, ভবানীপুর, মলিঘাট প্রভৃতি) ও কেশপুর (কলাগ্রাম, হাজীচক, চক মনসুর, জগন্নাথপুর, আকমুড়া) ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে। খড়্গপুর ২নং ব্লকের একটি গ্রামও জলমগ্ন। পশ্চিম মেদিনীপুরে সবমিলিয়ে ২ লক্ষের বেশি (২ লক্ষ ২৮ হাজার) মানুষ বন্যা দুর্গত হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। শুধু ঘাটালেই দুর্গত মানুষের সংখ্যাটা প্রায় ১ লক্ষ। প্রায় ১৫০০টি মাটির বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও ৩০০ বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত! সব মিলিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ২১০টি গ্রাম ও ওয়ার্ড (শহরের) বন্যাকবলিত বলেও জানা যায়। গত তিন দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর, নারায়ণগড় ও খড়গপুর গ্রামীণে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বন্যার কারণে। কেশপুরের জগন্নাথপুরে বছর দশেকের নাবালক সেখ গিয়াসউদ্দিন বন্যা দেখতে গিয়ে তলিয়ে যায়। নারায়ণগড়ের রথিপুরে যমুনা হ্যান্ডেল নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে দেওয়াল চাপা পড়ে। এছাড়াও, খড়্গপুর গ্রামীণে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে পুকুরে পড়ে। প্রতিটি বন্যা বিধ্বস্ত গ্রামে যত ত্রাণ লাগবে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন পাঁশকুড়াতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি ও হাওড়ার জেলাশাসকদের আমি বলছি, কোথাও যেন ত্রাণের কোন সমস্যা না হয়! আপনাদের সব কিছু দেওয়া আছে! যত ত্রাণ লাগবে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের কাছে এবং ত্রাণশিবির গুলিতে পৌঁছে দিন।”