দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ অক্টোবর: ৯-টি ডিপার্টমেন্ট। ছাত্র থাকার কথা দু’শোর কাছাকাছি। আছে প্রায় ৬০০! শিক্ষক (অধ্যাপক ও ইন্সট্রাক্টর মিলিয়ে) থাকার কথা ৫৪ জন। আছেন ৮ জন। যদিও, খাতায়-কলমে দেখানো আছে ২০ জন! অর্থাৎ, ১২ জন ‘ভুয়ো শিক্ষক’, যাদের বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই! এছাড়াও, নেই পরিকাঠামো। হয়না ক্লাস। শুধুই শিক্ষার নামে চলছে ব্যবসা! পড়ুয়ারা কিছুই শিখছেনা বছরের পর বছর ধরে। এমনই হতশ্রী অবস্থা পিপিপি (PPP- Public Private Partnership) মডেলে গড়ে ওঠা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর গভর্নমেন্ট আইটিআই কলেজের। যদিও, জেলার শিক্ষা সচেতন বিভিন্ন মহলের মতে, শুধু কেশপুর নয়; পিপিপি মডেলে গড়ে ওঠা জেলা ও রাজ্যের প্রায় বেশিরভাগ আইটিআই কলেজেরই এরকম অবস্থা! যেখানে, আইটিআই কলেজের দায়িত্বে থাকা সংস্থা বা বেসরকারি কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র নিজেদের আখের গোছানোর জন্য বা আর্থিক চাহিদা পূরণ করার জন্যই ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে পুরো বিষয়টিই পরিচালনা করে থাকে। কেশপুর গভর্নমেন্ট আইটিআই কলেজও এভাবেই চলছিল বছরের পর বছর ধরে। অবশেষে, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার কেশপুর সরকারি আইটিআই কলেজের পড়ুয়ারা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ-অবস্থান করেন দীর্ঘক্ষণ। তাঁদের পূর্ণ সমর্থন করে, সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘দুর্নীতির’ পর্দাফাঁস করলেন স্বয়ং কলেজের অধ্যক্ষও।
কলেজের অধ্যক্ষ সেখ মহম্মদ নাসিম আলি জানান, “যে ভাবে এই ধরনের কলেজগুলিকে কেন্দ্র করে অনৈতিক কাজ কর্ম সহ লুঠ চলছে তাতে সবথেকে বেশি ভুগতে হচ্ছে পড়ুয়াদের! আমি খড়্গপুর আইআইটি (IIT Kharagpur) থেকে এম.টেক করেছি। আমায় কেশপুর সরকারি আইটিআই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে বসিয়ে, আমারই চোখের সামনে একের পর এক দুর্নীতি করে চলেছে ম্যানেজমেন্ট।” শুধু কেশপুর আইটিআই কলেজ নয়, খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন রাজ্যে এমন ১৩টি সরকারি কলেজ আছে, যেগুলি পিপিপি মডেলে গড়ে উঠেছে; সেই সবগুলিতেই এমন লুটতরাজ চলছে! সরকারি কোষাগারের বরাদ্দকৃত টাকা লুঠ হয়ে চলেছে। কেশপুর আইটিআই এর অধ্যক্ষ বলেন, “ছাত্র – ছাত্রীরা তাদের নিজেদের পড়াশোনার স্বার্থে এই আন্দোলন গড়ে তুলেছে। আমরা এই বিষয় নিয়ে অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি, কিন্তু তাতে কোন সুরাহা হয়নি।” তাঁর অভিযোগ, “২০ জন শিক্ষকের একটি অবৈধ তালিকা আছে, তা NCVT’র পোর্টালেও আপলোড করা আছে; তবে ২০১৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১২ জন শিক্ষককের কোনো হদিশ নেই! ৮ জনকেই ক্লাস নিতে হয়। তাঁদের বেতন মাসে মাত্র ৬ হাজার টাকা! অথচ, শিক্ষকদের মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার চুক্তি করানো হয়। এখানেও কাটমানি নিয়ে নেওয়া হয়। শিক্ষকদের কোনো সুবিধা না দিয়ে, উল্টে নানা হুমকি দেওয়া হয়। নেই পরিকাঠামো। ল্যাবরেটরিতে নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। শ্রেণীকক্ষে নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চও। সর্বোপরি, প্রয়োজনীয় কোনো ক্লাস-ই হয়না। কিছুই শিখতে পারছেনা পড়ুয়ারা। শুধুই শিক্ষাকে নিয়ে ব্যবসা চলছে!” তিনি এও বলেন, সত্যি বলার জন্য হয়তো তাঁর চাকরি চলে যেতে পারে, তাঁকে টার্মিনেট করে দেওয়া হতে পারে! কিন্তু, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি প্রকৃত সত্য তুলে ধরলেন এবং অন্যান্য কলেজের অধ্যক্ষ-শিক্ষকরা পাশে থাকলে, তিনি ভবিষ্যতেও এই লড়াই চালিয়ে যাবেন।