thebengalpost.in
গ্রামীণ রাস্তার অবস্থা তথৈবচ :

নবীন কুমার ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুলাই: শাসকদলের সেই চিরাচরিত ‘লবি’ রাজনীতির জটে আটকে আছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের অন্তর্গত চাঁদড়া ও ধেড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পুনর্গঠন! ফলে, থমকে আছে এলাকার ‘উন্নয়ন’। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছেন, “বিগত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই এই এলাকার উন্নয়ন থমকে গেছে। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটে এই দু’টি পঞ্চায়েতেই জয়লাভ করেছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি। ফলে, রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অন্যান্য জায়গায় বাস্তবায়িত হলেও, এখানে করতে দেওয়া হয়নি। এরপর, লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপি’র জয়জয়কার। ফলে, বিগত ৩ বছর ধরে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের সংস্কার, নদী তীরবর্তী এলাকার ভাঙন-রোধ সহ পঞ্চায়েত স্তরের একাধিক কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।” ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়ে এলাকাবাসী ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে দু’হাত ভরে ভোট দেন শাসকদলের প্রার্থী জুন মালিয়া’কে। বিধায়ক নির্বাচিত হন টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ‘সেলিব্রেটি’ নায়িকা জুন। এলাকার মানুষ বিজেপি’র মোহ ত্যাগ করে এবং প্রবল গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ভুলে তৃণমূল প্রার্থী’কে নির্বাচিত করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, বিজেপি শাসিত পঞ্চায়েত বোর্ড গুলিতেও অনাস্থা আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়! বিজেপির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে শাসকদলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে। কিন্তু, কোথায় উন্নয়ন! এখনও পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনেই নজর দেয়নি শাসকদল। ফলে থমকে আছে উন্নয়নও। এমনটাই অভিযোগ চাঁদড়া ও ধেড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সাধারণ মানুষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

thebengalpost.in
চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েত :

thebengalpost.in
নদী তীরবর্তী এলাকায় নদী বাঁধে ভাঙন :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ধেড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ইতিমধ্যেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দিয়েছেন। ফলে, ধেড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে নতুন বোর্ড গঠন হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা! অন্যদিকে, চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি’র পঞ্চায়েত সদস্যরাও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছেন। অনাস্থার প্রস্তাবও জমা দেওয়া হয়েছে। দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত ফের শাসকদলের বোর্ড গঠনের লক্ষ্যে দিন গুনছে! এলাকাবাসী কিংবা স্থানীয় নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা তাকিয়ে রয়েছেন জেলা নেতৃত্ব ও বিধায়ক জুন মালিয়া’র নির্দেশের দিকে। ধেড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা বিজেপি শাসিত অঞ্চলের বিরোধী দলনেতা তাপস বেরা বলেন, “৮ ই জুলাই পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের প্রস্তাবসহ নোটিশ জারি হয়। কোনো কারণবশত দলীয় জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ আসে, পুনরায় নতুন নোটিশ জারি হবে।” এছাড়াও তিনি বলেন, “এলাকার মানুষ চরম সমস্যায় ভুগছেন। রাস্তাঘাটের অবস্থা বর্ণনা করার নয়! শহর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থান করেও, বর্ষার মধ্যে গ্রামের রাস্তাতে এক হাঁটু কাদা। এছাড়াও, পানীয় জলের অসুবিধা সহ সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় সরকারি সুযোগ-সুবিধে থেকে বঞ্চিত গত কয়েক বছর ধরে। জেলা নেতৃত্ব ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত বোর্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে, এই এলাকাকে উন্নয়নমুখী করাটাই শ্রেয়।” ক্যামেরার সামনে মুখ না খুললেও, তাঁদের সুপ্ত অভিযোগ এই যে- শহরের নেতা ও বিধায়কদের কাছে গ্রাম চিরকালই “দুয়ো রানী”! “সুয়ো রানী” শহরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন পূর্বতন বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতি; বর্তমান বিধায়ক জুন মালিয়া’ও সেই পথেই হাঁটছেন বোধহয়। তাই, এই এলাকার উন্নয়নের কথা ভাবছেন না! যদিও, চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত উপরডাঙ্গার তৃণমূল বুথ সভাপতি রুপক ঘোষ বলেন, “সদ্য নির্বাচন হয়েছে। সবকিছুই হবে। ধৈর্য রাখতে হবে। জেলা নেতৃত্ব ও বিধায়িকার উপরে আমাদের আস্থা আছে।” মেদিনীপুর সদর ব্লকের কনভেনার তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নয়ন দে বলেন, “বিধায়িকার নজরে রয়েছে এই দুটি অঞ্চল। খুব শীঘ্রই পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে নামবেন। উনি জনমানসে খুবই জনপ্রিয়। একুশের জুলাইয়ের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের পরেই পঞ্চায়েত গঠন সম্পন্ন হতে পারে। পঞ্চায়েত গঠনের পর এই এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বইবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা!” অন্যদিকে, এই বিষয়ে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা অভিজ্ঞ নেতা সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “বিষয়টি নিশ্চয়ই বিধায়কের নজরে আছে। তবে, দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই উনি যা করার করবেন। পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্ব পরবর্তী নির্দেশ দিলেই বিধায়কের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আমরা নিশ্চিত।”

thebengalpost.in
গ্রামীণ রাস্তার অবস্থা তথৈবচ :