দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ৩০ মার্চ: তিনদিন আগে জেলা তৃণমূলের বৈঠকেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহর তৃণমূলের বৈঠকেও সেই একই সুরে মেদিনীপুর কোতোয়ালী থানার এক পুলিশ অফিসারকে আক্রমণ করলেন প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক আশীষ চক্রবর্ত্তী (নান্টি)। যদিও দলের তরফে ক্যামেরার সামনে এই বিষয়ে কেউই মুখ খোলেননি, তবে বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছেন এ কথা। জানা গেছে, মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহর তৃণমূলের বৈঠকে আগাগোড়া দলীয় বিষয়ে পুলিশের (বিশেষত একজন পুলিশ অফিসারের) হস্তক্ষেপ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশীষ। এদিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তিনি নাকি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আমাদের কর্মীরাই রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট। আমাদেরকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামীদিনে লড়াই করতে হবে। আমাদের সাংগঠনিক ক্ষমতার উপর নির্ভর করেই নির্বাচনে জিততে হবে।” এজন্য কোন পুলিশি সাহায্যের প্রয়োজন নেই বলেই তাঁর মত‌। প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর পৌরসভার সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ২১ নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন গড়বেতার প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ চক্রবর্ত্তী। তবে, তিনি সাতশোরও বেশি ভোটে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই ওয়ার্ডে পরাজিত হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ সাইফুলের কাছে! আর, এই হার কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না আশীষ ওরফে নান্টি। তার দৃঢ় বিশ্বাস, কোতোয়ালী থানার ওই পুলিশ অফিসার-ই তাঁকে ডুবিয়েছেন! পরিকল্পনা মাফিক তাঁকে হারানো হয়েছে। আর, ওই পুলিশ অফিসারের এই বাড়বাড়ন্তের জন্য পরোক্ষে এক বিধায়কের ভূমিকা নিয়েও নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নান্টি! তবে, মুখে সরাসরি বিধায়কের নাম না আনলেও, পুলিশের বাড়াবাড়ি আর দলীয় অন্তর্ঘাত নিয়ে সরব হয়েছেন নান্টি। তিনি এনিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্যের কাছে নিজের অভিযোগ পত্রও পাঠিয়েছেন। প্রয়োজনে আবার পাঠাবেন বলেও জানিয়েছেন। অন্যদিকে,‌‌‌‌শনিবার জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে এবং মঙ্গলবার শহর তৃণমূলের বৈঠকে কড়া ভাষায় আশীষ চক্রবর্ত্তী আক্রমণ করেছেন ওই পুলিশ অফিসার-কে! এমনটাই জানা গেছে দলের বিভিন্ন সূত্রে।

thebengalpost.net
দলের বৈঠকে বলছেন আশীষ চক্রবর্ত্তী :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০-৫ ব্যবধানে মেদিনীপুর পৌরসভায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যে বোর্ড গঠনও হয়ে গেছে। হয়েছে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনও। শুধুমাত্র বাকি আছে সিআইসি (Chairman in Council) বা পুর পরিষদ নির্বাচন। দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজ্য নেতৃত্ব মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া’র পরামর্শকেই প্রাধান্য দিয়েছে। স্বভাবতই, সিআইসি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাঁর মতামতই গুরুত্ব পেতে পারে বলে মেদিনীপুরের অনেক নেতা জানাচ্ছেন। আর, এনিয়ে দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের ক্ষোভ আছে বলেও জানা গেছে। আর, এর মধ্যেই আবার জেলা ও শহরের পর্যালোচনা বৈঠকে শহরের এক পুলিশ অফিসারের ‘মাতব্বরি’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের অভিজ্ঞ নেতা তথা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচিত আশীষ চক্রবর্ত্তী। বৈঠকের বাইরে এই বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও, বৈঠক চলাকালীন নাকি রাজ্য সম্পাদক আশীষ ওরফে নান্টি’র এই বক্তব্যকে দলের শীর্ষ জেলা নেতৃত্ব সমর্থন জানিয়েছেন। বস্তুত, জেলা নেতৃত্ব এখন ঐক্যবদ্ধভাবেই এক ‘বহিরাগত’ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। সেজন্যই, শহর তৃণমূলের বৈঠকে দীর্ঘদিন পর সামনের সারিতে দেখা গেছে অনেক পোড়খাওয়া তৃণমূল নেতাদের, ইদানিং যারা বিভিন্ন কারণে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছিলেন। সেই তালিকায় অন্যতম নাম নিঃসন্দেহে যুবনেতা নির্মাল্য চক্রবর্তী। শুধু তাই নয়, পেট্রপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে, পশ্চিম মেদিনীপুর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মঙ্গলবারের মিছিলে সাংগঠনিক জেলা (মেদিনীপুর) তৃণমূল সভাপতি সুজয় হাজরা’র সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে হেঁটেছেন নির্মাল্য ও তাঁর অনুগামী ছাত্রনেতারা। ঐক্যবদ্ধ ওই মিছিলে জেলার ছাত্র নেতৃত্বও উদ্বুদ্ধ বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-কে সঙ্গে নিয়ে শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডব, রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ, আশীষ চক্রবর্ত্তী, জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়, মুখপাত্র সুকুমার পড়্যা- প্রমুখরা যে ঐক্যবদ্ধ লড়াই লড়তে চাইছেন, তাতে এবার সামিল হতে চাইছেন যুবনেতা নির্মাল্য চক্রবর্তী সহ আরও কয়েকজন। সবমিলিয়ে, ওই ‘পুলিশি শক্তি’ আর কোনো ‘বহিরাগত শক্তি’-কে দলের সাংগঠনিক বিষয়ে নাক গলাতে দিতে রাজি নয় জেলা ও শহর তৃণমূল!

thebengalpost.net
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মিছিল :

thebengalpost.net
যুব তৃণমূলের মিছিল :