দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ এপ্রিল: গত ২৪ মার্চ মেদিনীপুর লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। তারপর কেটে গেছে প্রায় ১৩-১৪ দিন। এখনও খড়গপুর শহরে বিজেপি-র বেশিরভাগ ‘দেওয়াল লিখনে’ নেই প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের নাম! তবে কি খড়্গপুরের বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি তাঁদের প্রার্থীকে (অগ্নিমিত্রা পারকে)? নাকি মেদিনীপুর লোকসভা থেকে দিলীপ-বিদায়ে এখনও কর্মীরা মন খারাপ করে বাড়িতে বসে আছেন? খড়্গপুরে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে অগ্নিমিত্রা যদিও বলেন, “আসতে আসতে কাজ শুরু হয়েছে। হাতে এখনও অনেক দিন সময় আছে। আমাদের মণ্ডল সভাপতিরা এবং জেলা সভাপতি এই বিষয়গুলো দেখছেন।” এরপরই অবশ্য অগ্নিমিত্রা’র সংযোজন, “এমনিতে আমাদের খুব একটা দেওয়াল লিখনের প্রয়োজন নেই। রামায়ণে হনুমানজি যেমন বুক চিরে শ্রী রামচন্দ্রকে দেখিয়েছিলেন; মেদিনীপুরের মানুষ, খড়্গপুরের মানুষ, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়ের মানুষও বুক চিরে দেখিয়ে দেবেন তাঁদের মনের দেওয়ালে রয়েছেন শুধু মোদীজি। তাই, দেওয়াল লিখন না হলেও, ২৫ মে মেদিনীপুরের মানুষ মোদীজিকে স্মরণ করেই পদ্মফুল বোতাম টিপবেন!”

thebengalpost.net
খড়্গপুর শহরের দেওয়ালে নেই অগ্নিমিত্রা পালের নাম:

অন্যদিকে, তৃণমূল সহ বিরোধীদের অভিযোগ, খড়্গপুর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তেই দিলীপ-অনুগামী (সাংসদ দিলীপ ঘোষ অনুগামী) কর্মী-সমর্থকেরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। তাই, সাংসদ দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে খড়্গপুর শহরে বিজেপি-র ‘প্রতীক’ (পদ্মফুল) এঁকে দেওয়াল লিখন শুরু হলেও; প্রার্থী ঘোষণার পর সেই দেওয়ালে আর প্রার্থীর নাম লেখা হয়নি! বিরোধীদের পাল্টা কটাক্ষ করে বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের অবশ্য দাবি, “আমাদের প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল পৌঁছনোর পর থেকেই আমরা সবাই প্রচারে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, দেওয়াল দেখার সময় সত্যিই হয়নি। দিদিভাই-কে কাছে পেয়ে আপামর মেদিনীপুরবাসীর যে উচ্ছ্বাস, তা দেখে আমরা অভিভূত! আর, দিলীপ দা-র আশীর্বাদ নিয়েই উনি পৌঁছেছেন। তোলামূল সহ জনবিচ্ছিন্ন বিরোধীরা বরং ওই আশাতেই থাকুন, আর আমাদের প্রার্থী সদর্পে এগিয়ে চলুক। আর উনি (অগ্নিমিত্রা) তো সত্যিই কিছু ভুল বলেননি, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, মেদিনীপুর থেকে অযোধ্যা সবার হৃদয়ে শুধুই মোদীজি!”

পাল্টা কটাক্ষ করতে অবশ্য ছাড়েননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, “উনি (অগ্নিমিত্রা পাল) আসলে হতাশায় ভুগছেন! যেখানেই যাচ্ছেন লোক নেই। আর, খড়্গপুর শহরে দিলীপ বাবুর যে’কটা অনুগামী ছিল, তারাও তো প্রচারে বেরোয়নি! ফলে প্রার্থীর নাম লিখবে কে? তাই, হতাশা থেকে উনি রামায়ণের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। আর, মানুষের হৃদয়ে নয়, মানুষের হাহাকারের মধ্যে নরেন্দ্র মোদী আছেন। ধর্মের বিষ ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া উনি করেছেন কি? মূল্যবৃদ্ধি, মানুষের প্রাপ্য টাকা আটকে রাখা, প্রকল্প বন্ধ, বেসরকারিকরণ করে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাকে ধ্বংস করে দেওয়া এমন ‘স্বৈরাচারী শাসক’ মানুষের হৃদয়ে কখনও থাকতে পারে? বরং, নরেন্দ্র মোদীর বুক চিরলে পাওয়া যাবে আম্বানি-আদানীদের! আর, সাধারণ মানুষের বুকে আছেন শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি তাঁর সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যেও দু’হাত ভরে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে কিছু না কিছু দিয়ে চলছেন; তা সে লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবা-বার্ধক্য ভাতা হোক, কিংবা কন্যাশ্রী-রূপশ্রী-ঐক্যশ্রী হোক। সরকারের আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও চলতি বছরে দু’দফায় ডি.এ বৃদ্ধি করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ, মোবাইল ফোন, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছেন। এমন মমতাময়ী মা-ই তো মেদিনীপুর সহ বঙ্গবাসীর হৃদয়ে থাকবেন, সেটাই স্বাভাবিক!” সুজয়ের পাল্টা অগ্নিমিত্রা অবশ্য বলেছেন, “তৃণমূলের জেলা সভাপতি একটু ভুল বলেছেন; সেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার, কুন্তল ঘোষ, মানিক ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের মতো কিছু জনের বুক চিরলে সত্যিই মমতা ব্যানার্জি-কে পাওয়া যাবে!” অন্যদিকে, ইতিহাস, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান মেদিনীপুরের বাসিন্দা তথা ভোটাররা আপাতত এই তীব্র দাবদাহে বুক চেরার পক্ষপাত-ই নন! তাঁরা শুধু চাইছেন, আকাশের বুক চিরে একটু শীতল বৃষ্টি নামুক!

thebengalpost.net
সাংবাদিকদের মুখোমুখি: