দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ৭ জানুয়ারি: ২০০৮ সালের পর ২০২৪। ফের ডিওয়াইএফআইয়ের (DYFI) ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ। গত ৫০ দিন ধরে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার ইনসাফ যাত্রা শেষে লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রথম বড় সমাবেশ ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও, রবিবাসরীয় ব্রিগেড লাল ঝান্ডায় ভরিয়ে দিয়েছেন ‘ক্যাপ্টেন’ মীনাক্ষী মুখার্জি ও তাঁর সহযোদ্ধারা। মঞ্চ থেকে বার্তা উড়ে এলো, “শূণ্য থেকেই নতুন করে যুদ্ধ শুরু হবে!” তবে, এবারের ব্রিগেড অবশ্য আপাদমস্তক নতুনত্বেই ভরা! এই প্রথম ব্রিগেডের মঞ্চে উড়ল ‘তেরঙ্গা’ জাতীয় পতাকা। গণসঙ্গীতের বদলে সভা শুরু হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “বাংলার মাটি, বাংলার জল” গান দিয়ে। সম্প্রতি যে গানটিকে আবার রাজ্য সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের তরফে!
DYFI-র কলকাতা জেলা সম্পাদক পৌলমী মজুমদার অবশ্য জানিয়েছেন, “ধর্মীয় বিভাজনের প্রক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটি লিখেছিলেন। বর্তমান সময়ে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মঞ্চে এই গান পরিবেশন করা হয়েছে।” আর মীনাক্ষী সমাবেশ শেষে বললেন, “যে গানগুলোকে ওরা বিকৃত করছে, পাঠ্যবই থেকে বাদ দিচ্ছে, সেগুলো আমাদের দেশের সংস্কৃতি। তা রক্ষা করাও আমাদের কাজ।” জাতীয় পতাকা-র ‘আগমন’ প্রসঙ্গে DYFI রাজ্য সম্পাদকের মন্তব্য, “দেশকে বাঁচানোর, রক্ষা করার দায়িত্ব সবার। দেশকে যাঁরা ডোবাতে চাইছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তো দাঁড়াতেই হবে। জাতীয় পতাকা ভূলুণ্ঠিত হলে, তাকে তো বুকে নিয়ে লড়তে হবে। মাতঙ্গিনী হাজরা লড়েছিলেন। ডিওয়াইএফআই-ও লড়ছে।” মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় ‘বিদ্রোহী কবি’ কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কিছু লাইন মনে করতে না পারায় মীনাক্ষী তার স্বভাবসুলভ সারল্যে বলে ওঠেন, “ভুলে গেছি!” আর, সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন সেখান থেকেই। সেলিম বলেন, “বাম আর দক্ষিণপন্থার মধ্যে ফারাক কী? মীনাক্ষী নজরুলের কবিতার দু’লাইন বলতে গিয়ে বললেন, ভুলে গেছি। ‘রণক্লান্ত’ তো! কিন্তু, মমতা কি বলতে পারেন, ভুলে গেছি? উনি এখনও ডহর বাবুকে খোঁজেন! মোদীও কখনও ভুল স্বীকার করেন না। কোনও ফ্যাসিস্ত শক্তিই পারে না। পারে শুধু বামপন্থীরা। চোরকে চোর বলতে, গুণ্ডাকে গুণ্ডা বলতে আর সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সাম্প্রদায়িক বলতে বামেরা ভয় পান না।”
সেলিমের এই কথায় জোরালো হাততালি দেয় ব্রিগেড। সেই উজ্জীবিত ভিড়ের উদ্দেশে দলের রাজ্য সম্পাদক এর পর বলেন, “যাঁরা চুরি করেছে, রাজ্যের মানুষ তাঁদের শাস্তি চাইছে। যৌবনকে দেখে বলছে, তোমরা পারবে।” আর, ব্যাটন বদলের ব্রিগেডে ‘ক্যাপ্টেন’ মীনাক্ষী-র বার্তা, “লড়তে এসেছি তো? আর গোটা রাজ্যের যে মাঠে ওরা রাজনীতিকে নিয়ে বলেছিল ‘খেলা হবে’, সেই মাঠের দখল, জিম্মেদারি সে লেনে কে লিয়ে আয়ে হ্যায় তো?….মূল এজেন্ডা ছেড়ে নকল যুদ্ধ নয়! দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হবে না ‘ভারত’ হবে, সেই এজেন্ডা নয়, পোশাক নিয়ে বৈষম্যের এজেন্ডা নয়, কে কোন খাবার খাবে, সে সব নিয়েও নয়; সরাসরি প্রশ্ন তুলতে হবে কর্ম সংস্থান, রুটিরুজির মতো আসল এজেন্ডা নিয়ে৷ মাঠ-ময়দানের দখল নিতে হবে৷ দখল নেবে তাঁরাই, যাঁরা আসল এজেন্ডা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কথা বলেন৷” সমাবেশ শেষে বুদ্ধ-বার্তাও (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা DYFI-র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বার্তা) শোনাতে ভোলেননি মীনাক্ষী। রবীন্দ্রসংগীতের মধ্যে দিয়েই যুব সংগঠনকে উজ্জীবীত করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। “যেখানে ডাক পড়ে/জীবন-মরণ ঝরে/আমরা প্রস্তুত।” নিজের বার্তায় ‘আমরা নূতন যৌবনের দূত’ গানের এই দু’টি লাইন উল্লেখ করে বুদ্ধদেব লিখেছেন, “এটাই DYFI। ব্রিগেড সাফল্যমন্ডিত হবে।”