দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ সেপ্টেম্বর: জল্পনার অবসান ঘটিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শহর ও ব্লক সভাপতিদের নাম ঘোষণা করলো তৃণমূল নেতৃত্ব। শহর ও ব্লকের মহিলা ও যুব সভাপতিদের নাম-ও ঘোষণা করা হয়েছে। মেদিনীপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি হিসেবে পুনরায় মনোনীত হয়েছেন বিশ্বনাথ পাণ্ডব। তিনি ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর-ও। জেলার রাজনীতিতে তিনি মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা’র ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। এর আগে সুজয়-কেও পুনরায় জেলা সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেছে দল। অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহরের যুব তৃণমূল সভাপতি হিসেবেও পুনরায় মনোনীত হয়েছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। সহ সভাপতি হিসেবে উঠে এসেছেন ‘নতুন মুখ’ আবীরলাল আগরওয়াল। শহর মহিলা তৃণমূলের দায়িত্বে পুনরায় অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌ রায়। সহ-সভাপতি বিধায়ক জুন মালিয়া ঘনিষ্ঠ সঙ্গীতা ভট্টাচার্য। শহর INTTUC’র দায়িত্বে বুদ্ধ মহাপাত্র। একসময় সুজয়-বিশ্বনাথের টিমে থাকলেও, এই মুহূর্তে জুন মালিয়া’র একাদশে বলেই সূত্রের খবর! রেল শহর খড়গপুরে নজর দেওয়া হয়েছে তেলেগু তথা অবাঙালি ভোটে। তাই, শহর সভাপতি হিসেবে দিব্যেন্দু পালকে সরিয়ে আনা হয়েছে সূর্য প্রকাশ রাও (মাস্টারজি) কে। শহর মহিলা সভানেত্রী হয়েছেন ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কল্যানী ঘোষ। শহর যুব সভাপতি ও INTTUC সভাপতি হয়েছেন যথাক্রমে- রাধেশ্যাম সিং (সোনু) ও বিবেকানন্দ দাস চৌধুরী। সবমিলিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সাংগঠনিক রদবদলে স্বচ্ছতা ও সক্রিয়তায় জোর দেওয়া হয়েছে যেমন, ঠিক তেমনই বিভিন্ন লবির মধ্যে যথাসাধ্য ভারসাম্য রাখাও হয়েছে! পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের আগে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়নি।
অন্যদিকে, ঘাটাল ও মেদিনীপুর দুই সাংগঠনিক জেলার ব্লক গুলিতেও অভিজ্ঞতা, স্বচ্ছতা, জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে প্রত্যাশিত ভাবেই। শালবনী ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে পুনরায় মনোনীত হয়েছেন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ তথা জেলা পরিষদের বন ও বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ নেপাল সিংহ। প্রত্যাশিতভাবেই গড়বেতা ৩ নং ব্লকের সভাপতি হলেন চিন্ময় সাহা। নারায়ণগড়ে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে সুকুমার জানা-কে। সরানো হয়েছে মিহির চন্দ-কে। কেশিয়াড়িতে নতুন ব্লক সভাপতি হয়েছেন শ্রীনাথ হেমব্রম। অন্যদিকে, জেলা INTTUC সভাপতি হিসেবে আগেই সরানো হয়েছিল জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি-কে। এবার, তাঁকে দাঁতন- ২ নং ব্লক সভাপতির পদ থেকেও সরানো হল। মাত্র ২৪ ঘন্টা আগেই ভাইরাল-অডিও’র পচা শামুকে পা কেটেছে শৈবালের! যেখানে শৈবালের কথা শুনে বোঝাই যাচ্ছিল, তাঁকে ব্লক সভাপতির পদ থেকেও ছেঁটে ফেলতে চলেছে দল। আর, সেই ক্ষোভ আর হতাশা থেকেই শৈবাল তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতাকে বলছিলেন, “সব আইপ্যাকের খেলা চলছে। পয়সার খেলা চলছে। অভিষেকের খেলা চলছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতেই পারছেন না, আইপ্যাক কী করছে। ‘সুজয়’ এসব খেলা করছে। এরকম আগে থেকে জানতে পারলে এত খাটতাম না। গোরু-গাধার মত এক বছর খেটেছি। ভুল জায়গায় রাজনীতি করা হয়ে গেছে। তখন আবেগে রাজনীতি করতে শুরু করে দিয়েছি। এদলে রাজনীতি করে মান সম্মান থাকে না। কাকে জানাতে যাবো? নেত্রী দেখা করবে না। অভিষেক দেখা করবে না। সব ওদের খেলা চলছে। টাকার খেলা, আইপ্যাকের খেলা। আমার অবশ্য কিছু ইন্টারেস্ট নেই। যা করে করুক!” এনিয়ে বৃহস্পতিবার-ই জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “এখন সমস্ত কিছুই দলের রাজ্য তথা শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করেন। কেউ যদি ক্ষোভ, হতাশা থেকে কিছু বলতে চান, তার উপযুক্ত জায়গা আছে। উনি সেই সুযোগ পেয়েওছিলেন। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠকে উনিও ছিলেন। দল যাকে যোগ্য মনে করছে দায়িত্ব দিয়েছে। একবছর আগে দল ওনাকেও দায়িত্ব দিয়েছিল! তখন এসব কথা বলেননি কেন? উনি দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ, ভালো করেই জানেন, কোনটা উনি ঠিক বলছেন, আর কোনটা হতাশা থেকে বলছেন!”
এদিকে, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলাতেও একাধিক রদবদল করা হয়েছে। কেশপুরে উত্তম ত্রিপাঠী’র পরিবর্তে নতুন ব্লক সভাপতি করা হয়েছে প্রদ্যুৎ পাঁজা-কে। সহ সভাপতি করা হয়েছে তিনজনকে, যথাক্রমে- শ্যামল আচার্য, জাহাঙ্গীর খান ও বিশ্বজিৎ বরদোলইকে। ডেবরা, সবং, পিংলায় যথাক্রমে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে – বিবেকানন্দ মুখার্জি, আবু কালাম বক্স এবং সেখ সবেরাতি-কে। খড়ার ও ঘাটাল ব্লকে যথারীতি ব্লক সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে অরূপ রায় ও দিলীপ মাঝিকে। ঘাটাল শহরের সভাপতি করা হয়েছে অরুণ মণ্ডলকে। চন্দ্রকোনা টাউন ও ক্ষীরপাই টাউনেও প্রত্যাশিতভাবেই সভাপতি হয়েছেন প্রদীপ সাঁতরা ও বীরেশ্বর পাহাড়ি। অন্যদিকে, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লককে বিধানসভা অনুযায়ী দুটি ব্লকে ভেঙে, দুই বিধায়ক যথাক্রমে জুন মালিয়া (মেদিনীপুর) ও দীনেন রায় (খড়্গপুর গ্রামীণ)- এর ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের একটি অংশে (মেদিনীপুর বিধানসভা)”র ব্লক সভাপতি হয়েছেন জুন ঘনিষ্ঠ গৌতম দত্ত এবং অপর অংশে (খড়্গপুর গ্রামীণ) পুনরায় ব্লক সভাপতি মনোনীত হয়েছেন দীনেন ঘনিষ্ঠ মুকুল সামন্ত। ঠিক একইভাবে গড়বেতা ব্লককেও বিধানসভা অনুযায়ী (গড়বেতা বিধানসভা ও শালবনী বিধানসভা) দু’টি অংশে ভাঙা হয়েছে। গড়বেতা অংশে সভাপতি হয়েছেন বরেন মন্ডল। শালবনী অংশে সভাপতি হয়েছেন ভাস্কর চক্রবর্তী।