দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ জানুয়ারি: কৃষকদের প্রতিরোধে তিন ফসলা কৃষি জমিতে মাছের ভেড়ি চালু করতে না পেরে, এখন রাতের অন্ধকারে নদীর জল ঢুকিয়ে সেই কৃষি জমি অকেজো করার চক্রান্ত করছে ভেড়ি মাফিয়ারা! এই অভিযোগে সরব হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে বামেদের নেতৃত্বে ব্লক ভূমি ও ব্লক প্রসাশন দপ্তরে কৃষকদের তুমুল বিক্ষোভ সহ ঘেরাও কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হল বৃহস্পতিবার। তার আগে লাল পতাকার এক বিশাল মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়। প্রসঙ্গত, গত দু’বছর ধরে সবং এর রামভদ্রপুর মৌজায় কেলেঘাই নদী সংলগ্ন বাঁধঘেরা ৮০০ একর তিনফসলা চাষ জমি দখল করে রাতারাতি ২৫-৩০টি জেসিবি মেসিন দিয়ে ভেড়ি তৈরির অভিযোগ উঠেছিল মাফিয়াদের বিরুদ্ধে! রাতের অন্ধকারে বন্দুক ঠেকিয়ে বাইক বাহিনী কৃষকদের হাতে নগদ ১০/২০ হাজার টাকা ধরিয়ে লিজে জমি লিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানোর অভিযোগও ওঠে। স্থানীয় বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, “১২০০’র অধিক কৃষক পরিবারের মধ্যে মাত্র ৯১ জনের কাছ থেকে এমন চুক্তি লিখিয়ে নিয়ে পুরো এলাকা জুড়ে ভেড়ি তৈর করা শুরু করলে কৃষকরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। বহু কৃষক ও কৃষক রমনী রক্তাক্ত হয়। পুলিশ প্রসাশন সহ ভূমি দপ্তর এমন ভেড়ি হাঙরদের বিরুদ্ধে আইনানুসারে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে প্রতিবাদী কৃষকদের নামে সাজানো মামলা দেয়। গড়ে ওঠে রামভদ্রপুর কৃষি ও কৃ্ষক বাঁচাও সংগ্রাম কমিটি। সেই সংগ্রাম কমিটি ও সারা ভারত কৃষক সভা একযোগে আপোষহীন লড়াই জারি রেখে ভেড়ী তৈরী বন্ধ করে দেয়। হাইকোর্টেও আইনি পদক্ষেপে কৃষকদের সুরক্ষার দাবি নিয়ে লড়াই চলছে এবং আপাতত হাইকোর্ট ভেড়ি তৈরিতে স্থগিতাদেশ জারি করেছে।”

thebengalpost.net
বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচি:

এমন সময়েই রাতের অন্ধকারে রামভদ্রপুর মৌজা থেকে তিন কিমি দূর থেকে নদীর জল ঢুকিয়ে তিন ফসলা কৃষি জমি নষ্ট করার যড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। অভিযোগ, নদীর জল কিংবা নোনা জল ঢুকিয়ে কয়েকশো বিঘার সরষে চাষ, মাদুর কাঠি, বোরো চাষের ধানের বীজ তলা নষ্ট করা হয়েছে। এলাকার কৃষক তুলসী পাল, মনালীসা পাল, শক্তিপদ প্রামানিক, নারায়ন মান্না, মোহিনী পাল প্রমুখরা বলেন, গত বছর বোরো চাষে ধানের শীষ বের হওয়ার মুখে, রাসায়নিক আগাছা নষ্ট করার তরল রাতের অন্ধকারে স্প্রে করে তাঁদের ফসল নষ্ট করা হয়েছিল। রক্ত দিয়ে জমি রক্ষার করার লড়াইতে পিছু হঠলেও, এখন চাষ জমি নষ্ট করে দিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পুলিশ প্রসাশন, ভূমি দপ্তর, বিডিও দপ্তরে অভিযোগ জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই, বৃহস্পতিবার কৃষকদের পরিবার সহ সারা ভারত কৃষক সভা সবং ব্লক কমিটি সবং বিডিও দপ্তরের সামনে মিছিল করে এসে বিক্ষোভ অবস্থান সহ ঘেরাও কর্মসূচীতে সামিল হয়। অবিলম্বে জমিতে নোনাজল ঢোকানো বন্ধ সহ দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে দেওয়া হয় স্মারকলিপি। কৃষক নেতৃত্ব চন্দন গুচ্ছাইত, “ক্ষেতমজুর সংগঠনের নেতৃত্ব অমলেশ বোস বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে নোনাজল ঢোকানো বন্ধ করা না হলে আগামী ২১ জানুয়ারি কৃষকরা নিজেদের জমি রক্ষা করতে নাঙল, কোদাল, কাস্তে নিয়ে ওই লিভারপাম্প ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযানে সামিল হবেন। তার জন্য কোনো অঘটন ঘটলে তার জন্য প্রসাশন দায়ী থাকবেন।” এই বার্তা নিয়ে এদিন সবং বাজারে মিছিলও করেন বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী কৃষক সহ কৃষক রমনীরা।