দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ জুলাই: নিঃসন্দেহে সাজ-পোশাকে মিল ছিল। পায়ে সাদা হাওয়াই চপ্পল, পরণে হলুদ পাড় সাদা শাড়ি। মঞ্চ জুড়ে বক্তৃতা দেওয়ার ঢংয়েও সেই মিল। ২০২২-এর ৬ জুলাই মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনের মঞ্চে (তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রস্তুতি সভায়) যুব তৃণমূল সভানেত্রী সায়নী ঘোষের মধ্যে তাই ১৯৯৩ সালের যুব কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই যেন খুঁজে পেলেন নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট! বললেন, “আমরা যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-কে দেখেছিলাম। আজ তাঁরই প্রতিচ্ছবি যেন দেখছি যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী সায়নী ঘোষের মধ্যে! মমতার সেদিনের লড়াই আর ত্রিপুরায় মার খেয়েও সায়নীর স্লোগান, আমরা দেখেছি।” লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে ‘হাতজোড়’ করলেন সায়নী! তবে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক অজিত মাইতি অবশ্য সূর্যকান্ত অট্ট-কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন। বললেন, “সূর্য খুব দ্রুত উন্নতি করছে!” প্রসঙ্গত, একুশে জুলাইয়ের শহীদ সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে, বুধবার (৬ জুলাই) শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূলের একটি ঐক্যবদ্ধ প্রস্তুতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল। মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজ্য যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। এছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত, দুই জেলার চেয়ারম্যান অজিত মাইতি, মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা, মেদিনীপুরের চেয়ারম্যান দীনেন রায়, সাংগঠনিক জেলার সকল বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, কর্মাধ্যক্ষ এবং জেলা ও ব্লক স্তরের নেতৃত্বরা।
দীর্ঘদিন পর মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলায় এমন ঐক্যবদ্ধ এবং উন্মাদনা পূর্ণ কর্মী সম্মেলন বা বৈঠক অনুষ্ঠিত হল নিঃসন্দেহে। মেদিনীপুরে তৃণমূলের মিলনের ঐকতান যেন বেজে উঠলো এদিন। ‘গদ্দার’দের প্রতিও ছিল বার্তা! হয়তো বিজেপি-তে দায়িত্ব বাড়ার পর, শুভেন্দু-ভূত ফের তাড়া করে বেড়াচ্ছে তৃণমূল কর্মীদের, আর তাই ‘পুষ্পা’র ডায়লগ ধার করে নিজের স্টাইলে সায়নী যুব কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে বললেন, “শর কাটেগা লেকিন ঝুকেগা নেহি, ইয়ে তৃণমূল কভি রুখেগা নেহি!” বক্তৃতার শুরুতে সায়নী উল্লেখ করতে ভোলেননি, “মেদিনীপুরের শহীদ (প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য)- এর নামাঙ্কিত এই প্রেক্ষাগৃহকেই সভাস্থল হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য যুব তৃণমূল নেতৃত্বকে ধন্যবাদ।” তিনি এও বলেন, “দিদিকে কথা দিয়ে এসেছি। একুশে জুলাই মেদিনীপুর থেকেই সভাস্থল ভরিয়ে দিতে হবে।” ‘গদ্দার’দের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের একজন সৎ কর্মী দশজন গদ্দরদের দেখে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।” মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত বলেন, “দিল্লিকে পথ দেখাবে কলকাতা, আর কলকাতাকে পথ দেখাবে মেদিনীপুর।” জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “আগামীদিনে সারা ভারতবর্ষ চাইবে বাংলার মেয়েকে।” দলের সকল নেতৃত্ব-ই এদিনের এই ঐক্যবদ্ধ কর্মী সম্মেলন বা প্রস্তুতি সভা আয়োজনের জন্য জেলা যুব সভাপতি সন্দীপ সিংহ-কে কৃতিত্ব দেন। বৈঠক ঘিরে যুব তৃণমূল কর্মীদের উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা-ও ছিল চোখে পড়ার মতো।