thebengalpost.net
নজরে মেদিনীপুর পৌরসভা :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ৩১ জানুয়ারি: শাসকদল বলে কথা! এরাজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য। মোদী বিরোধী চব্বিশের লড়াইয়েও ‘দিদি’ই দেশের অন্যতম মুখ। সেই দলের নিদেনপক্ষে একটা ‘কাউন্সিলর’ হতে পারলেও, বর্তে যেতে পারে এ ‘জনম’; থুড়ি আগামী পাঁচ বছর! স্বভাবতই, লাইনে শুধু বিদায়ী কাউন্সিলর বা তাঁদের স্ত্রী (দু’একটি ক্ষেত্রে স্বামী), আত্মীয় পরিজনেরাই নয়; এক্কেবারে নামজাদা ডাক্তার, অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রাক্তন বিধায়করাও। হ্যাঁ, ঐতিহ্যমণ্ডিত মেদিনীপুর পৌরসভায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ার লড়াইটা এখন এমনই জমজমাট হয়ে উঠেছে! প্রার্থী ঘোষণা হয়নি এখনও। নির্বাচন আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি-ই হবে বলে সূত্রের খবর। স্বভাবতই, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। তার আগে, শেষ মুহূর্তে টানটান উত্তেজনা! উত্তেজনা পার্টি অফিসগুলিতে। উত্তেজনা রাজনৈতিক পরিবারগুলিতেও। আর, আলোচনা? কোথায় নেই! চায়ের ঠেক থেকে ডাক্তারের চেম্বার, কলেজের উঠোন থেকে সরকারি অফিসের কেবিন। সর্বত্র। ইতিমধ্যে, লবি ধরার পালা প্রায় শেষ। বেশ কিছু লিস্ট নাকি জমাও পড়ে গেছে কালীঘাটের মন্দিরে, থুড়ি অফিসে! তবে, শিকে ছিঁড়বে কোন লবি বা প্রার্থীর ভাগ্যে? ‘অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই’, বলছেন জেলা নেতৃত্ব।

thebengalpost.net
নজরে মেদিনীপুর পৌরসভা :

প্রসঙ্গত, ২৫ ওয়ার্ডের মেদিনীপুর পৌরসভায় সবমিলিয়ে ১৭-টি আসন তৃণমূলের দখলে ছিল বিগত নির্বাচনে। তার মধ্যে, সংরক্ষণ, মৃত্যু (প্রণব বসু ও মণিলাল দাস) ও অন্যান্য কারণে অন্তত ১০ জন বিদায়ী কাউন্সিলর কিংবা তাঁদের আত্মীয়দের টিকিট প্রায় অনিশ্চিত বলে দলীয় সূত্রে খবর। বাকি যাঁরা নিশ্চিত বলে প্রায় সব মহল থেকেই জানা গেছে, তাঁরা হলেন- অনিমা সাহা (১ নং ওয়ার্ড); সৌরভ বসু (৯ নং ওয়ার্ড); টোটন শাসপিল্লি (১২ নং ওয়ার্ড); সৌমেন খান (১৮ নং ওয়ার্ড) এবং বিশ্বনাথ পান্ডব (১৯ নং ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর লিপিকা পান্ডবের স্বামী তথা দলের শহর সভাপতি)। এছাড়াও,‌ প্রায় নিশ্চিত ৬ নং ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পৌরপ্রধান প্রয়াত প্রণব বসু’র আসনের প্রার্থীর নামও। তিনি একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক তথা বিধানসভায় অল্পের জন্য প্রার্থী না হওয়া ব্যক্তিত্ব। তৃণমূলের জেতা আসন নয়, তবে প্রায় নিশ্চিত ১৫ নং ওয়ার্ডের প্রার্থীর নামও। এখানে প্রার্থী হতে চলছেন, গতবারের পরাজিত প্রার্থী তথা তৃণমূলের জেলা নেতা হিমাদ্রি খান অথবা তাঁর ছোট ছেলে তথা দলের যুব নেতা কুমারদীপ খান (পাপাই খান)। ২৫ নং ওয়ার্ডেও একজন শ্রমিক নেতার প্রার্থী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা বলে জানা গেছে। এছাড়াও, ১০ নং ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর অসিত মহাপাত্রের আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায়, তাঁর স্ত্রী’র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, ২ নং ওয়ার্ডের ডাকাবুকো বিদায়ী কাউন্সিলর তথা দলের অন্যতম যুব নেতা নির্মাল্য চক্রবর্তীর আসনটিও মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। এক্ষেত্রে, তাঁর স্ত্রী’র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ঠিকই, তবে প্রার্থী ‘নির্বাচন’ নিয়ে জোরালো টক্কর হতে চলেছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। বিভিন্ন মহল থেকে ওয়ার্ডের দু’জন সক্রিয় মহিলা কর্মী এবং একজন জাতীয় কংগ্রেস থেকে যাওয়া মহিলা নেত্রী’র নাম উঠে আসছে! তবে, প্রয়াত দেবী চক্রবর্তী’র প্রতি ওয়ার্ডবাসীর ‘সেন্টিমেন্ট’ বা ‘আবেগ’ এর বিষয়টিতে হয়তো সিলমোহর দিতে পারে রাজ্য নেতৃত্ব! ঠিক একইভাবে, ৫ নং ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর মৌ রায়ের আসনেও এবার তিনি (মৌ রায়) ছাড়াও একাধিক নাম উঠে আসছে! দৌড়ে আছেন স্বনামধন্য এক শিশু চিকিৎসকও। একই অবস্থা, ৮ নং, ১৪ নং ও ১৬ নং ওয়ার্ডেও। বিদায়ী কাউন্সিলর কিংবা তাঁদের স্ত্রী বা স্বামী দৌড়ে থাকলেও, উঠে এসেছে একাধিক নাম। শেষ অবধি রাজ্য নেতৃত্ব কোন নামে সিলমোহর দেয়, সেদিকেই তাকিয়ে তাঁরাও।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় :

উল্লেখ্য যে, দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরার সঙ্গে শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডবের সুসম্পর্ক বা বোঝাপড়ার বিষয়টি নিয়ে নিঃসংশয় সব পক্ষই। অন্যদিকে, মেদিনীপুর বিধানসভার বিধায়ক জুন মালিয়া’র সঙ্গে সম্প্রতি তাঁদের একটা ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে বলে মানছেন দলের বিভিন্ন মহল। এদিকে, বিধায়কের সঙ্গে সুসম্পর্ক বর্তমান পৌর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপারসন সৌমেন খান এবং দলের জেলা যুব সভাপতি সন্দীপ সিংহের। কাজেই, একাধিক তালিকা বা প্রস্তাব যে রাজ্যে গিয়েছে তা মানছেন প্রায় সব পক্ষই। এছাড়াও, পিকে’র টিমের তরফেও গেছে নাম। শেষ মুহূর্তে নাকি পুলিশ ও প্রশাসনের কাছ থেকেও প্রস্তাবিত প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হতে পারে রাজ্যের তরফে! তারপরই চূড়ান্ত হতে পারে প্রার্থীদের নাম। এদিকে, দলের দু’জন প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্য নেতাও নাকি প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে। তার মধ্যে একজনের প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত বলে জানা গেছে। ১৭ নং ওয়ার্ডে একজন তরুণী উকিলের (দলের ও ওয়ার্ডের প্রয়াত নেতার মেয়ে), ২৩ নং ওয়ার্ডে একজন শিক্ষিকা, ৭ নং ওয়ার্ডে একজন অধ্যাপিকা ও একজন শিক্ষিকা, ৮ নং ওয়ার্ডে একজন কলেজের শিক্ষাকর্মী, ২৪ নং ওয়ার্ডে একজন যুবনেতা ও ক্লাব সংগঠক, ১৩ নং ওয়ার্ডে একজন সমাজসেবী এবং ১৪ নং ওয়ার্ডে একজন মহিলা সমাজকর্মীও লড়াইয়ে আছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এসব নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “দল বড় হচ্ছে। স্বভাবতই, প্রার্থী হওয়ার লড়াইও বাড়ছে এবং বাড়াটাই স্বাভাবিক। তবে, শেষ অবধি রাজ্য নেতৃত্ব যাকেই প্রার্থী করুন না কেন, তার জন্য দলের সকল নেতাকর্মীই ঝাঁপিয়ে পড়বেন এটা নিশ্চিত।”

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন :