দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ ফেব্রুয়ারি:আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মেদিনীপুর শহরকে ‘বাম’ হাতে রেখে ধর্মা-কেরানীচটি ‘বাইপাস’ দিয়ে ভাদুতলা হয়ে পৌঁছে যাবেন আনন্দপুরের (কেশপুর ব্লকের) সভাস্থলে। তৃণমূল কংগ্রেসের ‘যুবরাজ’, এই মুহূর্তে দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে ওঠার কথা বিকেল ৩-টা নাগাদ। তার আগে তটস্থ মেদিনীপুর আর কেশপুরের নেতা-নেত্রীরা! ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ মেটাতে কি বার্তা দেন দলের সাংগঠনিক কান্ডারী (সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক), সেদিকেই তাকিয়ে জুন মালিয়া থেকে সুজয় হাজরা, বিশ্বনাথ পাণ্ডব থেকে সৌমেন খান, শিউলি সাহা থেকে মহম্মদ রফিক। যদিও, মুখে তাঁরা সকলেই বলছেন, “তৃণমূলে কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। মতপার্থক্য আছে!” মুখে বললে কি হবে, গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা দলের রাজ্য সম্পাদক জুন মালিয়া অনুগামীদের সঙ্গে সুজয় হাজরা-বিশ্বনাথ পাণ্ডব অনুগামীদের ‘নেট মাধ্যম’ থেকে শহরের ‘ওলিতে-গলিতে’ লড়াই চলছে, তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের একবার ‘বেআব্রু’ হয়ে পড়েছে দলের গোষ্ঠী-কোন্দল। বাধ্য হয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মেদিনীপুর শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব স্বীকার করেই নিয়েছেন, “বিধায়ক যেভাবে শহর জুড়ে বিভাজনের রাজনীতি করছেন, তা না মেটালে তৃণমূল কংগ্রেসের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে!”
হ্যাঁ, বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের কয়েকমাস পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা এবং মেদিনীপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসে ‘আড়াআড়ি বিভাজন’ একেবারে সুস্পষ্ট হয়েছে। একদিকে, বিধায়ক জুন মালিয়া, মেদিনীপুর পৌরসভার পৌরপ্রধান সৌমেন খানের গোষ্ঠী; অন্যদিকে জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়, রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ, শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবদের গোষ্ঠী। পৃথক পৃথক কর্মসূচি থেকে শুরু করে সাংবাদিক বৈঠক- সবকিছুই দেখেছেন আমজনতা থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। রাস্তা থেকে সমাজ মাধ্যম- লড়াই আরও তীব্রতর হয়েছে। সম্প্রতি, দলের বহিষ্কৃত নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বিধায়ক জুন মালিয়া’র সাক্ষাৎ এবং এক মঞ্চে থাকা নিয়ে হয়েছে বিক্ষোভ। আবার, পৌর নির্বাচনে (২০২২ এর) বিশ্বনাথ পাণ্ডবদের হয়ে জুন মালিয়া’র প্রচারের ছবি সমাজমাধ্যমে হয়েছে পোস্ট। পাল্টা বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী জুনের জন্য সুজয়-বিশ্বনাথদের ‘জানকবুল’ লড়াইয়ের ছবি পোস্ট করেছেন তাঁদের অনুগামীরা। এসব মেটাতে কোনো বার্তা দেবেন কি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক? তাকিয়ে জুন-সুজয়-বিশ্বনাথদের অনুগামীরা।
উল্টো দিকে মুখে যতই মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, অজিত মাইতি-রা বলুন না কেন, “কেশপুরে অশান্তি নেই! ওসব মিডিয়ার বাড়াবাড়ি!” রাজ্যবাসী দেখেছেন, দুই গোষ্ঠীর বোমাবাজি, রক্তারক্তি- কাণ্ড। শুনেছেন বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা’র গর্জন। দেখেছেন ব্লক সহ-সভাপতিদের (ব্লক সভাপতি প্যদ্যোৎ পাঁজা ও শিউলি সাহা বিরোধী গোষ্ঠী) প্রকাশ্য সাংবাদিক বৈঠক। এসব কি আদৌ মিটবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার পর? সেদিকেও তাকিয়ে ঘাটাল-কেশপুরের নেতারা। এর মধ্যেই, জল্পনা দলবদল ঘিরে! পদ্ম ফুলের কে কে ঘাসফুলের পতাকা নেবেন?কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি জানিয়েছেন, “অনেকেই থাকতে পারেন।” তবে, হিরণ যে ‘এই মঞ্চে’ থাকবেন না, তা দু’পক্ষই নিশ্চিত করেছে আগেই। এর মধ্যেই সকাল থেকে জেলা জুড়ে বাস পরিবহন থমকে গেছে। নেতার সভার জন্য প্রায় ৯০০ বাস তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে। দলের বাস পরিবহন সংগঠনের সভাপতি পার্থসারথি ঘনা জানিয়েছেন, “৮০০-৯০০ বাস তোলা হয়েছে। তবে, সব লাইনেই বাস থাকবে। থাকবে সরকারি বাস, অটো প্রভৃতি।”