দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ আগস্ট: একুশের রথযাত্রায় ঘটা করে ভূমি পূজা হয়েছিল। ফের বাইশের রথ যাত্রাও পেরিয়ে গেল। এখনও হয়নি জেলা তৃণমূলের পার্টি অফিস! পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল কর্মীরা তাই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। একে অপরকে সমর্থনও জানাচ্ছেন। পরে অবশ্য নেতাদের ধমক খেয়ে সেই সব পোষ্ট মুছেও দিচ্ছেন! দিনকয়েক আগেই যেমন এক কর্মী লিখেছিলেন, “জেলা পার্টি অফিস করার জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে তোলা হয়েছিল, সে টাকা কোথায় গেল?” তাঁকে অনেকেই সমর্থন-ও জানিয়েছিল। পরে অবশ্য সেই পোস্ট উধাও হয়ে যায়। তবে, নেতারা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “এবার আর ভূমি পূজা নয়, পার্টি অফিস হবে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।” উল্লেখ্য যে, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে একাধিকবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কার্যালয় তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও, তা বাস্তবে সম্ভব হয়নি! ২০১৩ সালে দাসপুরের প্রয়াত বিধায়ক তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি অজিত ভুঁইয়ার নামে একটি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করে, ওই ট্রাস্টের নামে রবীন্দ্রনগর এলাকায় ২৮০৪ বর্গফুট (০.০৬৪৩ একর) একটি জায়গা কেনা হয়। তখন, জেলা সভাপতি ছিলেন দীনেন রায়। বর্তমানে, তিনি মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান এবং বিধায়ক। তারপর, মেদিনীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র কালেক্টরেট গেট থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রবীন্দ্রনগর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের স্বপ্নের জেলা কার্যালয় তৈরির প্রক্রিয়া শুরু গত বছর ভূমি পুজোর মাধ্যমে। ২০২১ সালের ১২ জুলাই রথযাত্রার দিন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে ভূমিপুজো করে তৃণমূল কার্যালয় তৈরির প্রক্রিয়া শুরুর কথা ঘোষনা করেন তৎকালীন অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও বিধায়ক অজিত মাইতি। বর্তমানে, ঘাটাল ও মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলায় বিভক্ত তৃণমূলের তিনি কো-অর্ডিনেটর বা সমন্বয়সাধক। তবে, পার্টি অফিস এখনও তৈরি হয়নি! ভূমিপুজো’র পর এক ইঞ্জিও কাজ এগোয়নি। ক্ষুব্ধ কর্মীরা, হাসাহাসি করছেন বিরোধীরা!
একাংশ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কথায়, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতে থাকলেও, দল গঠনের পর থেকে আজ পর্যন্ত স্থায়ী কোনও ঠিকানা নেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের। নেতাদের মর্জি মতো দল পরিচালনা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। কখনও জেলা পরিষদের কক্ষ, কখনোবা ফেডারেশন অফিস, কখনও আবার গান্ধী মোড়ের কাছাকাছি ভগ্নপ্রায় বাড়ি, কখনও কখনও ভাড়াবাড়ি, আবার কখনও নান্নুরচকে ট্রাস্টি বোর্ডের দানকরা বাড়িই হয়েছে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়। যখন যিনি দলের জেলা সভাপতি হয়েছেন, তখন তিনি তাঁর পছন্দ মতো জায়গা থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন! জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “রাজ্যের মানুষ আমাদের তিন-তিনবার ক্ষমতায় বসালেন। দল বেড়েছে বহরে। অথচ জেলায় আমাদের একটা স্থায়ী কার্যালয় নেই, এটা আমাদের লজ্জা!” আবার, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মীতো বিস্ফোরক অভিযোগ করছেন, “দু’দফায় জেলা তৃণমূলের কার্যালয় তৈরির নামে কয়েক কোটি টাকা তোলা হয়েছে!” কেউ বলছেন দু’ কোটি, কেউ চার আবার কেউ ছয় বা আট! শুনে বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস কটাক্ষ করেছেন, “কর্মীরা তো ঠিকই বলছেন। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, জেলা তৃণমূলের নেতাদের বাড়িতে যদি ইডি যায়, কোটি কোটি টাকা বেরোবে!” বিতর্কে উড়িয়ে, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায় অবশ্য জানিয়েছেন, “২০১৩ সাল থেকে আমি অনেকবার কার্যালয় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। দলে আলোচনা হয়েছে। গত বছর রথযাত্রার দিন ভূমি পুজো করে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু করোনা, ইয়াস, বন্যা সহ নানা কারণে কার্যালয় তৈরির কাজ শুরু করা যায়নি।”
গতবছর ভূমি পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি, বর্তমান কো-অর্ডিনেটর তথা পিংলার বিধায়ক ও সহ সভাধিপতি অজিত মাইতি বলেন, “টাকা পয়সা জোগাড় করে উঠতে পারিনি। আমাদের দলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো এত টাকা নেই। মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে করতে হবে। তবে দলের কার্যালয় তৈরি হবে।” আর, বর্তমানে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “আমি ২০১৩ সাল ও ২০২১ সালের বিষয় নিয়ে কিছু বলতে পারবোনা! কর্মীদের অভিযোগ বা কেন কার্যালয় তৈরির কাজ শুরু হয়নি, তাও বলা সম্ভব নয়। আমি মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব পেয়েছি ২০২১-এর ১৬ আগস্ট। ওইদিন থেকেই নান্নুরচকে সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ও শহর তৃণমূলের কার্যালয় তৈরি করে, সেখান থেকেই আমরা দল পরিচালনা করছি। সর্বক্ষণের জন্য কর্মীও নিযুক্ত করা হয়েছে। তবে, দল দায়িত্ব দিলে একমাসের মধ্যে রবীন্দ্রনগরের ওই জমিতে জেলা তৃণমূলের স্থায়ী কার্যালয় গড়ে তোলার কাজ শুরু করবো। দায়িত্ব নিয়েই বলছি।” এদিকে, পার্টি অফিস তৈরি নিয়ে এইসব বিতর্কের মধ্যেই আগামীকাল (সোমবার), সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় যাচ্ছেন দুই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা ও আশিস হুদাইত, দুই চেয়ারম্যান দীনেন রায় ও অমল পন্ডা, কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি সহ দলের বিধায়করা এবং শাখা সংগঠনের সভাপতিরা। পার্থ-অনুব্রত’র গ্রেপ্তারির পর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে ‘ভোকাল টনিক’ এবং নতুন করে ব্লক সভাপতি মনোনীত করার বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে বলে সূত্রের খবর।