দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ আগস্ট: বেশ কয়েক বছর ফের জেলা শহর মেদিনীপুরে লাল ঝাণ্ডার স্রোত বয়ে গেল। লাল বাহিনীর শক্তি দেখলো পুলিশ-প্রশাসনও! মার খেয়ে, রক্তাক্ত হয়েও প্রবীণ সিপিআইএম কর্মী তবুও শেষ অবধি লড়ে গেলেন শাসকের পুলিশের বিরুদ্ধে। আসলে দুর্নীতির দায়ে যখন শাসক দলের রাজ্যের মহাসচিব (সদ্য প্রাক্তন) আর বীরভূমের রাঙামাটির ত্রাস-কে জেলে যেতে হয়, যখন স্বয়ং দলনেত্রী-ও ভয় পেতে শুরু করেন, সেই সময়-ই শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ফাঁসটা বামেরা যেন আরও জোরে টেনে দিতে চাইলেন! তাই, হাজার হাজার লাল ঝাণ্ডার উদ্দীপ্ত জনস্রোত থেকেও আওয়াজ উঠলো- “আরো জোরে মারো টান, রানী হবে খান খান!” মিছিলের সামনে হেঁটে চলা সেলিম-সুজন’দের হাতে ধরা সুবিশাল ব্যানারেও লেখা, “চোখে চোখ রেখে- আরও জোরে মারো টান/ চোরেদের রানী হবে খানখান!”
মঙ্গলবার সকাল থেকেই এক শক্তিশালী লাল বিস্ফোরণ যেন আছড়ে পড়েছিল ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরে। তবে, পুলিশের ব্যারিকেড ও আক্রমণ প্রতিহত করে শেষ পর্যন্ত জেলাশাসকের ক্যাম্পাস দখল করেন ঐক্যবদ্ধ বাম কর্মীরা। তবে, তার আগে সিপিআইএমের বাসে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা কেশপুরের সুপা মোড়ে আক্রমণ চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। রাস্তা ঘিরে, বাস আটকিয়ে ইঁট পাথর ছুঁড়ে বাস ভাঙচুর সহ আক্রমণ করার অভিযোগ ওঠে। ঘাটাল মহকুমার ঘাটাল, ক্ষীরপাই ও চন্দ্রকোনা থেকে আসা বাস গুলিও আটকানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। সুপা মোড়ে তৃণমূলের ছোঁড়া ইটের আঘাতে রক্তাক্ত হন ক্ষীরপাই এলাকার সিপিআইএম কর্মী হিরক রায় ও আব্দুল সাত্তার। এছাড়াও, জখম হন আরোও সাত জন। সেই রক্তাক্ত শরীর নিয়েও আরোও ৩৭ কিমি পথ পেরিয়ে এসে মেদিনীপুর শহরে জেলাশাসকের দপ্তরে অভিযানে সামিল হন অবশ্য এই কর্মীরা।
এরপর, মেদিনীপুর শহরে জেলাশাসকের দপ্তরের সামনেও পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে। লাঠির আঘাতে মাথা ফেটে রক্ত পড়তে থাকে চন্দ্রকোনা থানার সিপিআইএম কর্মী নন্দ সাঁতরার। রক্তাক্ত অবস্থাতেও বিক্ষোভ অভিযানে হাজির থাকেন তিনি। এছাড়াও, মেদিনীপুর শহরের সিপিআইএম কর্মী মণিশংকর গিরির বুকে পেটে লাঠির গুঁতো মারার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেন সহযোগে তাঁর চিকিৎসা চলছে। অনুমতি থাকা সত্ত্বেও পুলিশের এই অতি সক্রিয়তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। রাজ্য সম্পাদক বলেন, “যাঁরা আজ আক্রমণ করলেন, তাঁরাই চোরদের পাহারা দেন। আর আমরা লাল ঝান্ডা দিয়েই সেই চোরদের শাস্তি সহ জেলে ভরার দাবীতে লড়াই করছি। পুলিশ কেনো সেই কাজ করছে না, তার পিছনেও কারণ আছে। লুঠের টাকা সরানো ও কালিঘাটে পৌঁছে দেওয়ার কাজে পুলিশের একটা অংশ জড়িত আছে।” এদিন, আটদফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জেলাশাসকের দপ্তরে তুলে দেওয়া হয়, তবে উপস্থিত ছিলেন না জেলাশাসক আয়েশা রানী!