দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ ডিসেম্বর: তুষের আগুন যেন ধিক ধিক করে জ্বলছিলই! সম্প্রতি, বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় (হিরন) এর সঙ্গে মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের অনুগামীদের গোপন-বিরোধ লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি, খড়্গপুরের রেল পরিষেবা ও রেলের আধিকারিকদের নিয়ে বারবার ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন হিরণ ও দিলীপ। সর্বোপরি, বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর দু’জনকে একই কর্মসূচীতেও দেখা যায়নি! তবে, এ সবকিছুই চলছিল ‘পর্দার আড়ালে’! সেভাবে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি কোন পক্ষই। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যা ঘটলো, তাতে ‘বিরোধ’ বা ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ এক্কেবারে প্রকাশ্যে চলে এলো। দলের মহিলা নেত্রী তৃষা চাকলাদার সরাসরি দলের উত্তর মন্ডল সভাপতি দীপসোনা ঘোষের বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে হেনস্থা, আক্রমণ এবং কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ আনলেন! শুধু ক্যামেরার সামনে মুখ খোলাই নয়, খড়্গপুর টাউন থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করলেন।

thebengalpost.net
অভিযোগ জানানোর পর বিজেপি নেত্রী তৃষা চাকলাদার :

thebengalpost.net
অভিযুক্ত দীপসোনা ঘোষ :

ঘটনার সূত্রপাত, বৃহস্পতিবার বিধায়ক হিরণময় চট্টোপাধ্যায়ের একটি শীতবস্ত্র প্রদান কর্মসূচিকে ঘিরে। শহরের সুভাষপল্লী এলাকায় ওই কর্মসূচি সম্পন্ন করে সন্ধ্যার ঠিক মুখে ফিরে যান বিধায়ক হিরণ। আর, তাঁর চলে যাওয়ার ঠিক পরেই, তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত মহিলা নেত্রী তৃষা চাকলাদার ও একাধিক বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠল উত্তর মন্ডল সভাপতি দীপসোনা ঘোষ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। তৃষা বললেন, “দীপসোনা ঘোষ, কুনাল সরকার, অঙ্কিত শর্মা প্রমুখরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছেন, বিধায়কের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম বলে। শারীরিকভাবেও নিগ্রহ করা হয়েছে। এমনকি খুন করার চেষ্টাও হয়েছে। আমাদের দলীয় কার্যকর্তারা তা রুখে দিয়েছেন বলে বেঁচে ফিরলাম।” কিন্তু কেন? তৃষার মারাত্মক অভিযোগ, “এর আগে কু-প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাতে রাজি হইনি। একটা আক্রোশ ছিলই। আজ সকালেও ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, যাতে বিধায়কের অনুষ্ঠানে না যাই। গিয়েছিলাম বলেই আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে দীপসোনা ঘোষ বলেছেন, “অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ওখানে একটা গন্ডগোল চলছিল। আমরা কয়েকজন গিয়ে তা মিটিয়ে দিয়েছি। বিধায়কের অনুষ্ঠানে যে কেউ যেতে পারে তা নিয়ে বলার কিছু নেই”। তবে, উপস্থিত থাকেন নি উত্তর মণ্ডল সভাপতি নিজেই! কেন? দীপসোনা বললেন, “ওটা দলীয় সংগঠনের তরফে আয়োজন করা হয়নি। আমরা খবর পাইনি।” আর, বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বললেন, “এটা সমাজবিরোধীদের কাজ। দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে বলে শুনেছি। আর, এইসব দুষ্কৃতীরা বিজেপির কর্মী হতেই পারে না। ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মীরা, নরেন্দ্র মোদির সমর্থকরা এইসব কাজ করতেই পারে না! পুলিশকে অবিলম্বে বলবো এই সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। খড়্গপুর থেকে সমাজবিরোধীদের বিতাড়িত করতে হবে। খড়গপুর শহর সাধারণ মানুষের জন্য, দুষ্কৃতীদের জন্য নয়”! বলার অপেক্ষা রাখে না, ঘটনাকে ঘিরে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এক্কেবারে প্রকাশ্যে চলে এল! যদিও গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি’র জেলা সভাপতি সৌমেন তেওয়ারি জানিয়েছেন, “কি হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব। আইন আইনের পথে চলবে”। তবে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে জানিয়েছেন, “ওদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব-বিভেদ নিয়ে বলার কিছু নেই! তবে, বিজেপিতে কোনো ভালো মানুষ থাকতে পারবেন না, হলফ করে বলতে পারি।”

thebengalpost.net
বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় :