Politics

Dilip-Suvendu: দিলীপ বনাম শুভেন্দু! মেদিনীপুর-খড়্গপুরের পুর-ভোটের আগে চিন্তার ভাঁজ বিজেপির কপালে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ জানুয়ারি: সামনেই পুর ভোট। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই দেওয়াল লিখনও শুরু করে দিয়েছে। সিপিআইএম-তো একধাপ এগিয়ে কিছু আসনে প্রার্থীও ঠিক করে ফেলেছে! তবে, এখনও ময়দানে দেখা যায়নি প্রধান বিরোধীদল বিজেপি’কে। বিধানসভার আগে ঠিক যতটাই তাদের আক্রমণাত্মক মেজাজে পাওয়া গিয়েছিল, পৌরসভা নির্বাচনের আগে ঠিক ততটাই ঝিমিয়ে আছে তারা! সদ্য মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতি বেছে নেওয়া হলেও, বিজেপি যেন ‘ছন্নছাড়া’ আর পারস্পরিক ‘কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি’র পর্যায়েই আছে। সমাজমাধ্যমে চলছে পারস্পরিক ব্যক্তি আক্রমণ আর বাস্তবের মাটিতে চলছে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব! বিধানসভায় বিপুলভাবে হেরে গিয়েও, বিজেপি ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি, বরং এ-ওর দোষ দেখতে গিয়ে আরো ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে। মনে করছে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে রাজনীতি সচেতন মেদিনীপুর-খড়্গপুরবাসী। তাই, আসন্ন পুর-লড়াইতে বিজেপি যেন হারার আগেই হেরে বসে আছে! আর, এজন্য গোষ্ঠী-কোন্দলকেই দায়ী করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষণকারীরা। তাঁদের মতে, মেদিনীপুরের ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’র কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নিয়ে সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বিরোধী দলনেতা তথা অবিভক্ত মেদিনীপুরের জনপ্রিয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী’র ‘লড়াই’ এখন প্রকাশ্যে এসে গেছে। আর, সেটাই এখন দলের অন্দরেও সর্বাধিক আলোচিত!

নবনিযুক্ত জেলা সভাপতি তাপস মিশ্র’র সাথে দিলীপ ঘোষ (ফাইল ছবি) :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন রাজ্য সভাপতি হিসেবে ব্যাপক ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির কেন্দ্রবিন্দুতেই শুধু থাকেননি, এলাকার বিধায়ক এবং পরবর্তীকালে সাংসদ হিসেবেও দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুর-খড়্গপুরের বিজেপির প্রধান স্তম্ভ ছিলেন! তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা। বিধানসভার আগে অবধি জনপ্রিয়তাও ছিল নজরকাড়া। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর কেন, রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই বিজেপির নেতাকর্মীরা দীলিপ বাবুকে মেনে চলতেন। পরিস্থিতি বদলেছে। অসংখ্য হেভিওয়েট আর দিলীপ অনুগামীদের হারের মধ্যেও খোদ মুখ্যমন্ত্রী-কে হারিয়ে দিয়েছেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের চরম প্রভাবশালী নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আবার এখন বিরোধী দলনেতাও। স্বাভাবিকভাবেই, দলের মধ্যে শুভেন্দুর জায়গা শক্ত হয়েছে। দিলীপও এখন আর রাজ্য সভাপতি নন। নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বেশ গুরুত্বও দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী-কে। তাই, মেদিনীপুর-খড়্গপুরের বিজেপি নেতারা দিলীপ বাবু-কে ভুলে গিয়ে শুভেন্দু’র দলে ভিড়ছেন। আর, সেখানেই বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত! তৃণমূলে থাকাকালীনও মেদিনীপুরের রাজনীতিতে শুভেন্দু’র দাপট ছিল। সেই দাপট বিজেপি-তেও ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর শুভেন্দু। তবে, জায়গা ছাড়তে রাজি নন মেদিনীপুরেরই ‘ভূমিপুত্র’ দিলীপও! ফলে, বিরোধ বাঁধছে গোপনে। নতুন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তাপস মিশ্র এবং দিলীপ ঘোষের ডাকা পুর-ভোটের বৈঠক শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা এড়িয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য, এসবের মধ্যেই ছোটো-বড়-মাঝারি প্রত্যেক নেতাকেই যে যার নিজের ওয়ার্ডে বিচ্ছিন্নভাবে পুরো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।

শুভেন্দু অধিকারী নেতাইয়ে (ফাইল ছবি):

তবে, শুভেন্দু-দিলীপ গোষ্ঠী যুদ্ধ নিয়ে কোনো নেতাই মুখ খুলতে নারাজ! যদিও, বিজেপির সদর দপ্তর সূত্রানুযায়ী, শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে দিলীপ ঘোষের একাধিক স্বজন পোষন এবং স্বৈরাচারী আচরণের নিদর্শন তুলে ধরে, অভিযোগ জানিয়েছেন। আর, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলাতে বিজেপি’র গোষ্ঠী কোন্দল এবং প্রার্থী নিয়ে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনের আগে, প্রাক্তন জেলা সভাপতি সমিত দাসের সময়কালেই। দলের মধ্যে (পুরনো অর্থাৎ আদি) অনেকেই তাঁর কান্ডকারখানা মানতে পারছিলেন না! এনিয়ে অনেকবার জল ঘোলাও হয়েছিল। তিনি বরাবরই দিলীপ ঘোষের খুবই ঘনিষ্ঠ। নিজে প্রার্থী হয়েছিলেন মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে। তাঁর ঘনিষ্ঠ আরও ২-৩ জন অযোগ্যকেও টিকিট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। দিলীপ ঘোষের সৌজন্যেই এখন তিনি রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি এবং মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার পর্যবেক্ষকও। আর তাই, দলের সেই পুরানো নেতাদের অনেকেই ফের ‘অপমানিত’ হয়ে শুভেন্দুর হাত শক্ত করতে এগিয়ে এসেছেন। সেই তালিকায় আছেন মেদিনীপুরের দুই পোড়খাওয়া বিজেপি নেতা অরূপ দাস, শুভজিৎ রায় (বান্টি)ও। এছাড়াও, রমাপ্রসাদ গিরি, আশীর্বাদ ভৌমিকেরাও আছেন। অন্যদিকে, দিলীপ বাবুর সঙ্গে আছেন, নবনিযুক্ত জেলা সভাপতি তাপস মিশ্র, সমিত দাস, সৌমেন তেওয়ারি প্রমুখ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মীর স্পষ্ট বক্তব্য, “এই গোষ্ঠী বিভাজনের কারণেই পুরভোটে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে! আদতে, প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলকেই অক্সিজেন দেওয়া ছাড়া কিছুই না। আমাদের মতো কর্মীরা মনস্থির করেই নিয়েছে আসন্ন পুর-ভোট নয়, ২০২৩ এর পঞ্চায়েত থেকেই ফের দল (বিজেপি) নিয়ে ভাববো।” আর, এই বিভাজনকে কেন্দ্র করে বিজেপি’র নীচুস্তরের কর্মীদের মধ্যেও যে হতাশা আর অভিভাবকহীনতার আঁচ পড়েছে তা বলাই বাহুল্য। এসবের মধ্যেই আবার খড়্গপুরে বিঁধে আছে ‘হিরণ-কাঁটা’! ফলে, একপ্রকার বলাই চলে পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির পরিবর্তে বাম-কংগ্রেস অথবা নির্দলরাই হতে চলেছে!

দুই বড় নেতার‌ পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক যদিও কোথাও নষ্ট হয়নি (নিজস্ব ও প্রতীকী ছবি) :

News Desk

Recent Posts

Dayananda Garani: বিশ্বজয়ী দলের একমাত্র বাঙালি প্রতিনিধি! মেদিনীপুরের ‘ভূমিপুত্র’ দয়ানন্দকে রাজকীয় সংবর্ধনা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পূর্ব মেদিনীপুর, ৬ জুলাই: ভারতের বিশ্বজয়ী দলে বাংলার কোনও 'ক্রিকেটার' না…

2 hours ago

Digha Jagannath Mandir: কিছু কাজ এখনও বাকি, আগামী বছর থেকেই পুরীর আদলে দীঘার রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে; স্পষ্ট করলেন মমতা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পূর্ব মেদিনীপুর, ৫ জুলাই: "কিছু অন্যরকম কথা শোনা গেলেও প্রকৃত বাস্তব…

17 hours ago

Jhargram: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বোমা উদ্ধার হয়েছিল ঝাড়গ্রামে, নদীর পাড়ে সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করল এয়ার ফোর্স ও বম্ব স্কোয়াড

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম, ৫ জুলাই: গত শনিবার (২৯ জুন) ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর থানার ভুলনপুর…

19 hours ago

Primary TET 2014: “প্রয়োজনে IBM, TCS, Wipro কিংবা হ্যাকারদের সাহায্য নিন!” OMR-র দুর্নীতির রহস্যভেদে CBI-কে কড়া নির্দেশ বিচারপতি মান্থার

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ৫ জুলাই: প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় OMR শিট বা উত্তরপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।…

1 day ago

IIT Kharagpur: একাধিক শূন্যপদে সিনিয়র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করবে IIT খড়্গপুর, আবেদন করুন ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ৫ জুলাই: কেন্দ্রীয় সরকারের একটি গবেষণামূলক প্রকল্পে কাজের সুযোগ রয়েছে…

1 day ago

T20 World Champion: মেরিন ড্রাইভে জনসমুদ্রে ভাসলেন রোহিতরা; ওয়াংখেড়েতে স্মৃতির সাগরে ডুব দিলেন দ্রাবিড়-কোহলি

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ৫ জুলাই: বিমানবন্দরে 'ওয়াটার স্যালুট' দিয়ে শুরু। মেরিন ড্রাইভে বিশাল জনসমুদ্রের…

2 days ago