দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২২ এপ্রিল:এক ফোনেই যেন ঘুচলো বিভেদ! মেদিনীপুর সাংগঠনিক তৃণমূলে এখন মিলনের আবহ। বিশেষত, জেলা শহরে গত তিন-চার মাস ধরে শাসকদলের মধ্যে যে সুস্পষ্ট ‘বিভাজন’ প্রকট হয়ে উঠেছিল, তা যেন অনেকটাই এখন মিলিয়ে যাওয়ার পথে! এপ্রিলের শেষে দলের জেলা কমিটি গঠিত হওয়ার আগে তাই স্বস্তিতে দলের সব মহলই। সূত্রের খবর অনুযায়ী, দিনকয়েক আগেই ফোন এসেছিল স্বয়ং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই মুহূর্তে শাসকদলের ‘সংগঠন’ সামলানোর গুরুদায়িত্ব যাঁর ঘাড়ে, তিনিই নিজেই ফোন করেছিলেন ঐতিহাসিক শহরের ঐতিহ্যমন্ডিত ‘মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল’ এর বাংলা বিষয়ের শিক্ষক তথা দলের (TMC) জন্মলগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে পরিচিত দীপঙ্কর সন্নিগ্রাহী (কাজল দা নামেই শহরে জনপ্রিয়)-কে। দীপঙ্কর আবার মেদিনীপুর পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতিও। যদিও, পুরো বিষয়টিই তাঁর (দীপঙ্কর সন্নিগ্রাহী-র) কাছে ছিল আকস্মিক এবং আশাতীত! এমনকি, ফোন এসেছিল সমস্ত গোপনীয়তা রক্ষা করেই। তবে, কোনোভাবে তিনি আবেগ সামলাতে না পেরে একান্ত ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের কাছে প্রকাশ করে ফেলেছিলেন এই ‘খুশির খবর’! আর, তারপর সেই খবর পৌঁছে যায় সংবাদমাধ্যমের কাছেও। এরপরই, শহরের এই বিশিষ্ট শিক্ষক নেতা তথা সৃজনশীল মানুষটির মোবাইলে মুহুর্মুহু ফোনের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে! বাধ্য হয়ে তিনি এখন অচেনা নম্বর ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি, বেশিরভাগ সময় তাঁর মোবাইল বন্ধ-ই থাকছে। তবে জানা গেছে, শহর এবং সাংগঠনিক জেলার হালহকিকত নিয়ে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সারা রাজ্যের সাথে সাথে মেদিনীপুর পৌরসভার প্রার্থী-তালিকা নিয়েও দলীয় গোষ্ঠী কোন্দল একেবারে প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল! প্রথমে একটি তালিকা প্রকাশিত হয়, তার কয়েক ঘন্টার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে আরো একটি তালিকা পাঠানো হয়। শিক্ষক এবং তৃণমূল ওয়ার্ড সভাপতি দীপঙ্কর বাবু’র ওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও প্রথমে তাঁদের তথা জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-দের পছন্দের প্রার্থী সঙ্গীতা পালের নাম ঘোষিত হয়। কিন্তু, কয়েকঘণ্টা’র মধ্যে অন্য গোষ্ঠী’র পক্ষ থেকে পাঠানো নাম অর্থাৎ বিদায়ী কাউন্সিলরের স্ত্রী মলি মহাপাত্রের নামে সিলমোহর পড়ে। যা নিয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ হন দীপঙ্কর বাবু সহ ওয়ার্ডের অধিকাংশ তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা! এমনকি, প্রথমদিকে তাঁরা প্রচারে নামতেও অস্বীকার করেন। এরপরই, শহরের অপর গোষ্ঠী’র প্রচ্ছন্ন অঙ্গুলিহেলনে দীপঙ্কর বাবুকে নাকি কোতোয়ালি থানায় ডেকে পাঠানো হয় এবং অবিলম্বে প্রচারে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়। যা নিয়ে তিনি চরম ‘অপমানিত’ বোধ করেছিলেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন। তবে, শেষ অবধি ওই ওয়ার্ডে সিপিআইএম প্রার্থী সৃজিতা দে বক্সী হারিয়ে দেন মলি মহাপাত্র-কে। সবমিলিয়ে ২৫-টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০-টি জিতে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যে, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সিআইসি (Chairman in Council) সহ পূর্ণাঙ্গ বোর্ড গঠনের পালা শেষ হয়েছে মেদিনীপুর পৌরসভায়! তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই বোর্ডে প্রাধান্য পেয়েছেন বিধায়ক জুন মালিয়া ও চেয়ারম্যান সৌমেন খানের ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর-রাই। এদিকে, জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা ও শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডব গোষ্ঠী’র সাথে জুন-সৌমেন’দের দূরত্ব ও মনোমালিন্য নিয়েও শহরের রাজনীতিতে কানাঘুষো চলছিল! এর মধ্যেই এলো সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ফোন। তারপরই যেন শাসকদলে বদলে গেল, শহরের গোষ্ঠী রাজনীতির আবহ। বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান আর জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা’র ‘শীতল’ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ‘উষ্ণতা’ ফিরছে! শুধু সূত্র নয়, অনেক সময় ‘ছবি’ অনেক কথা বলে দেয়। গত দু’একদিনে মেদিনীপুর পৌরসভার ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা’র স্ত্রী মৌসুমী হাজরা কিছু ছবি পোস্ট করেছেন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। যদিও, সেই সমস্ত ছবি পৌর ও জেলা প্রশাসনের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের! তা সত্ত্বেও সেই সমস্ত ছবিই যেন বলছে, “অনেক হয়েছে, এবার মিলেমিশে কাজ করতে হবে!” যদিও, এই তত্ত্ব একপ্রকার উড়িয়ে দিয়েছেন, সুজয়-সৌমেন দু’জনই।
জানা গেছে, শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুর নয়, অন্যান্য জেলাতেও এভাবেই বুথ, ওয়ার্ড বা ব্লক স্তরের যেকোনো বিশ্বস্ত ও প্রবীণ কর্মীদের ফোন করতে পারেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বা তাঁর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ। তাই, দীপঙ্করের কাছে ফোন আসায় একেবারেই অবাক নন, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা। বৃহস্পতিবার তিনি বেঙ্গল পোস্ট-কে জানিয়েছেন, “সারা রাজ্য জুড়ে দলের সাংগঠনিক সমস্ত বিষয় যেমন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নখদর্পণে, ঠিক তেমনই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-ও প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। গত তিন বছর ধরে, তিনি বা তাঁর অফিস দলের প্রতিটি বুথ স্তরের কর্মী সম্পর্কেও খোঁজ খবর রাখেন। কর্মীরা কিভাবে কাজ করছে, কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা, তা নিয়মিত খোঁজ রাখে তাঁর দপ্তর। তাই, আমাদের দলের অভিজ্ঞ এবং দলের জন্মলগ্ন থেকে বিশ্বস্ত সৈনিক শিক্ষক দীপঙ্কর সন্নিগ্রাহী-র কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন আসাটা কোনো ‘আকস্মিক’ বা ‘নতুন’ বিষয় নয়। এটা একটা ধারাবাহিক পদ্ধতি। যেটা দলের বুথ স্তর বা ওয়ার্ড স্তরের কর্মীর সাথেও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নিবিড় সম্পর্কের দিকটিই তুলে ধরে। তিনি একদিকে যেমন সাংগঠনিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন, ঠিক তেমনই কর্মীদের নানা পরামর্শও মন দিয়ে শোনেন।” কিন্তু, দীপঙ্কর বাবু ‘কি’ জানিয়েছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে? এনিয়ে জেলা সভাপতি’র বক্তব্য, “দীপঙ্কর দা’র সাথে পরে কথা হয়েছে। শুনলাম, দলের সাংগঠনিক নানা বিষয় নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় খোঁজখবর নিয়েছেন।” এদিকে, বহু প্রতীক্ষিত দলের জেলা কমিটিও চলতি এপ্রিল মাসেই গঠিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জেলা সভাপতি। তিনি জানিয়েছেন, “রাজ্যের অনুমোদন এলেই ঘোষণা করা হবে।” এই মাসেই জেলা কমিটি গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দেননি! এও জানিয়েছেন, “জেলা কমিটি গঠিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে শহর, ব্লক ও অঞ্চল কমিটিও তৈরি হবে।” অন্যদিকে, দলের সাংগঠনিক স্তরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব কতখানি, তা ফের একবার টের পেয়েছেন বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব। সম্প্রতি, দলের মহিলা শাখার রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বিভিন্ন জেলার মহিলা সভানেত্রীদের নাম ঘোষণা করেছিলেন নতুন করে। আর তা ঘোষিত হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই স্থগিত হয়ে যায় বলে দলীয় সূত্রে খবর! কারণ, ২০২১ এর ১৬ আগস্ট দলের জেলা সভাপতি, যুব সভাপতি ও মহিলা সভাপতি-দের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিক্রমে। তারপর, গত ৩ মার্চ (২০২২) নজরুল মঞ্চে’র সভায় কয়েকজন জেলা সভাপতি পরিবর্তন করেছেন স্বয়ং দলনেত্রী। সেই সময়ও মঞ্চে তাঁর পাশে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়-রা। তাই নতুন করে, দলের অভ্যন্তরে কোন পরামর্শ ছাড়াই হঠাৎ মহিলা সভাপতিদের পরিবর্তনে অনুমোদন দেওয়া হয়নি মমতা-অভিষেকদের তরফে! সূত্রে’র খবর অনুযায়ী এরপরই তড়িঘড়ি বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব-কে রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পুরানো জেলা সভানেত্রীরাই থাকছেন। এমনকি, আগামী ৫ মে থেকে ২১ জুলাই অবধি রাজ্য জুড়ে ফের শুরু হতে চলা ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির প্রচারেও নেতৃত্ব দেবেন পুরানো জেলা সভানেত্রী-রাই। ফলে, মেদিনীপুর, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম সহ বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলাতেই পুরানো মহিলা সভানেত্রীরাই আপাতত দায়িত্বে থাকছেন জুলাই অবধি। পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে তাই কল্পনা শেঠি (মেদিনীপুর) ও কাবেরী ভট্টাচার্য (ঘাটাল)-ই আপাতত দায়িত্বে, মামণি মান্ডি নয়। ঝাড়গ্রামেও বীরবাহা হাঁসদা নয়, ছত্রধর পত্নী নিয়তি মাহাতো-ই দায়িত্বে থাকছেন অন্তত ২১ জুলাই অবধি।
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…