দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ ফেব্রুয়ারি:”হসিমউদ্দিন বাবুর মতো লোকেরাই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের মুখ হতে চলছেন। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, সারা বাংলার জন্য এটা প্রযোজ্য হতে চলেছে। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদে দল হাসিমউদ্দিন বাবুর মতো লোকেদেরই স্বীকৃতি দেবে।…কোনো দাদার তল্পিবাহকতা করে পঞ্চায়েতে প্রার্থী হওয়া যাবেনা। পাহারাদারের নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়!” কেশপুরের আনন্দপুরের সভামঞ্চ থেকে এভাবেই ‘নতুন তৃণমূল’ এর আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের ‘প্রথম প্রার্থী’র নাম ঘোষণা করে গোটা রাজ্যকে বার্তা দিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেখ হসিমউদ্দিন। কিন্তু, কে এই হসিমউদ্দিন? কেশপুরের ব্লকের উঁচাহার এলাকার বাসিন্দা। তাঁর নামে আবাস যোজনার বাড়ি এসেছিল। তিনি নেননি! ফিরিয়ে দিয়েছেন। কারণ, তিনি মনে করেছেন, বাড়ি তৈরির সরকারি বরাদ্দ ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার সঙ্গে আরও ২ লক্ষ টাকা লাগালে তবেই স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকার মতো একটি বাড়ি তৈরি করতে পারবেন। এদিকে, মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। তাই, ওই ২ লক্ষ টাকা থাকলে তিনি সেই টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন! হসিমউদ্দিনের এই সততাই মুগ্ধ করেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-কে। তাই, মঞ্চ থেকেই তাঁকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। মঞ্চে ডেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন। উত্তরীয় পরিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছেন। তাঁর ভাঙা বাড়ির ছবি মঞ্চ থেকে মাঠে উপস্থিত লক্ষ লক্ষ তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের দেখিয়েছেন। আর, তাঁর মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন।
শুধু হসিমউদ্দিন নন, ‘নতুন তৃণমূল’ এর ‘সম্পদ’ হিসেবে আরও দু’জনকে (দম্পতিকে) মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্জু দলবেরা ও তাঁর স্বামী অভিজিৎ দলবেরা। নীল পাড় সাদা শাড়ির এক মহিলাকে দেখিয়ে অভিষেক বলেন, “ইনি মঞ্জু দলবেরা। কেশপুর ব্লকের গোলাড় পঞ্চায়েতের সদস্যা। ওঁর স্বামী তৃণমূলের বুথ সভাপতি।” পাশের সাদা চেক শার্টের সাদামাটা, লাজুক এক যুবকে দেখিয়ে অভিষেক বলেন, “ইনি অভিজিৎ দলবেরা। মঞ্জু দলবেরার স্বামী। ইনি সেই নির্দিষ্ট বুথের বুথ সভাপতি। এঁদের কী মনে হয় আপনাদের? এক জন গ্রাম পঞ্চায়েত মেম্বার (সদস্য), তাঁর স্বামী ১০ বছর বুথ সভাপতি আছেন।” ওই দম্পতিকে দেখিয়ে বিরোধীদল তথা সমালোচকদের উদ্দেশ্যে অভিষেকের বার্তা, “যাঁরা দেখান আমাদের ব্লক সভাপতি, ফুলেফেঁপে উঠেছেন। তাঁদের দেখাচ্ছি। আমার মিটিংয়ে আজ আমার ছবি থাকবে না। অভিজিৎ দলবেরা এবং মঞ্জু দলবেরার ছবি থাকবে।” অভিষেক এও শোনান, “অভিজিৎ দলবেরার মা, মঞ্জুদেবীর শাশুড়ির নামে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছিল। মঞ্জু দেবী ব্লক অফিসে গিয়ে বলেছেন, আমার স্বামী বুথের সভাপতি। আমি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা। আমি তৃণমূল করি। আমি ঘর নেব না।” এর পর, ওই দম্পতির বাড়ির ছবি দেখান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। বলেন, “একটু বৃষ্টি হলে চাল চুঁইয়ে জল পড়ে। এমন দশা এই পরিবারের। এই হচ্ছে পঞ্চায়েতে তৃণমূলের মুখ। আমি গর্ববোধ করি যে, আমি এমন একটি দলের সাধারণ সম্পাদক যেখানে অভিজিৎবাবু এবং মঞ্জুদেবীর মতো এক জনকে পেয়েছি। প্রত্যেক তৃণমূল কর্মী যাঁরা এই মিটিং চাক্ষুষ করছেন, তাঁরা শপথ নিন, এ ভাবেই মানুষের হয়ে কাজ করবেন।” অভিষেক এও জানান, অভিজিতের বাড়ি তৈরির দায়িত্ব নেবে দল। অপরদিকে, অভিজিৎ ও মঞ্জু’র মতো আরও অনেক তৃণমূল কর্মী তৈরি করার দায়িত্ব তিনি তাঁদের উপরই দেন। একইসঙ্গে, কেশপুরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য তিনি ‘একমাসের’ চরম সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন দলীয় নেতা কর্মীদের। আর, কানায় কানায় ভরে ওঠা কেশপুরের আনন্দপুরের সভাকে তাঁর এ যাবৎকালের ‘শ্রেষ্ঠ জনসভা’ আখ্যা দিয়েছেন।