দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ৬ ফেব্রুয়ারি: কি আশ্চর্য সমাপতন! সকাল সকাল অনেকের বাড়িতেই সরস্বতী পুজোর জাগপ্রদীপ-টা নিভে গেল! স্তব্ধ হল সঙ্গীত জগত। কন্ঠহারা ভারতবাসী। ২৭ দিনের লড়াই শেষে ইহলোক থেকে সুরলোকে পাড়ি দিলেন ‘সুর সম্রাজ্ঞী’ লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)। সরস্বতী পুজো’র পরদিন (৬ ফেব্রুয়ারি), রবিবার, সকাল ৮ টা ১২ মিনিটে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ‘সুরের সরস্বতী’! কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায়, গত ১১ জানুয়ারি তাঁকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন নবতিপর শিল্পী। প্রথম থেকেই তাঁকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছিল। ৩০ জানুয়ারি শিল্পীর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু, বয়সজনিত নানা সমস্যার কারণে শেষ পর্যন্ত আর লড়তে পারলেন না তিনি। বসন্ত আসার আগেই স্তব্ধ হল ‘কোকিলকন্ঠ’! ৯২ বছর বয়সে আপামর দেশবাসী-কে কাঁদিয়ে চলে গেলেন প্রবাদপ্রতিম এই সঙ্গীত শিল্পী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগেও সঙ্কটজনক অবস্থায় একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে ‘ভারতরত্ন’ লতা মঙ্গেশকর-কে। কিন্তু, অনুরাগীদের আশ্বস্ত করে প্রত্যেকবারই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। এবার আর ফিরলেন না! সুরলোকে পাড়ি দেওয়ার জন্য বেছে নিলেন, সরস্বতী পুজোর পরের দিনটিকেই। তাঁর প্রয়াণে, দেশে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করল কেন্দ্র সরকার। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় মুম্বাইয়ের শিবাজী পার্কে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে তাঁকে।

thebengalpost.net
বিদায় সুরের সরস্বতী (Lata Mangeshkar) :

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইনদোরের এক সংগীত পরিবারে জন্ম হয় লতা মঙ্গেশকর। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি সংগীত জগতের সুবিখ্যাত ধ্রুপদী গায়ক। বাবার থেকেই প্রথম তালিম নেওয়া। মাত্র ১৩ বছর বয়সে একটি মারাঠি সিনেমার জন্য প্রথমবার গান রেকর্ড করলেও, তা পরবর্তী সময়ে ছবি থেকে বাদ পড়ে! ১৯৪৫ সালে মুম্বইয়ে পাড়ি দেন তিনি। ১৯৪৮ সালে প্রথম হিন্দি ছবিতে গান। ‘মজবুর’ ছবিতে। ১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারে ভূষিত করে। তাঁর অবদানের জন্য ২০০১ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করা হয়। এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীর পর এই পদক পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সঙ্গীতশিল্পী। ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দ অনরের অফিসার খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, ৪টি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ২টি বিশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের সন্তানদের মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠ হলেন লতা মঙ্গেশকর (মা শেবন্তী মঙ্গেশকর)। ‘সুর সম্রাজ্ঞী’র অন্যান্য ভাইবোনেরা হলেন, বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর, মীনা মঙ্গেশকর ও হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।