দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ১৫ ফেব্রুয়ারি: মঙ্গলের সন্ধ্যাতেই (সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ) নিভলো বাঙালির সন্ধ্যা প্রদীপ খানি! সুরলোকে পাড়ি দিলেন ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ‘সুর সম্রাজ্ঞী’র প্রয়াণের (৬ ফেব্রুয়ারি) ৯ দিনের মধ্যেই ফের সঙ্গীতাকাশ স্তব্ধ হল! সুরের এক ‘শতাব্দী’র অবসান ঘটলো দুই নবতিপর পর কিংবদন্তি শিল্পী’র প্রয়াণে। মারণ ভাইরাস কাবু করেছিল দুই বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতশিল্পীকেই! তবে, করোনা-কে জয় করেছিলেন দু’জনই। কিন্তু, জীবনযুদ্ধে হার মানতে হল তাঁদের! প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। সঙ্গীতশিল্পীকে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তড়িঘড়ি গঠিত হয় মেডিক্যাল বোর্ড। জানা যায়, শৌচাগারে পড়ে গিয়ে চোট পান শিল্পী। এর পর বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও। তাঁর দু’টি ফুসফুসেই সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ স্থিতিশীল হচ্ছিল। কিন্তু, মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ হঠাৎ তাঁর শারীরিক জটিলতা বাড়ে।
শিল্পীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বলেন, “সুস্থ হয়ে উঠছিলেন ক্রমশ! হঠাৎ একদিনের মধ্যে কি যে হয়ে গেল। উনি আমাকে গান গাওয়ার অনুরোধ করতেন। ওঁকে কখনও কখনও গান শোনাতেও হয়েছে। আমি অবাক হয়ে যেতাম, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পী আমার কাছে গান শুনতে চাইছেন! জন্মদিনে ওঁকে ফোন করেছিলাম। তখন গান শোনাতে বলেছিলেন।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “একটা শতাব্দীর আর কেউ রইলেন না! এ ক্ষতি অপূরণীয়। আমি মনে করি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ভারতরত্ন। আজ রাতে ওঁকে পিস ওয়ার্ল্ডে রেখে দেব। বুধবার ১২টার সময় দেহ নিয়ে রবীন্দ্র সদনে রাখা হবে। ৫টা পর্যন্ত ওখানে থাকবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য। আমি যেমন করে হোক পৌঁছনোর চেষ্টা করব। এর পর রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান গান স্যালুট দিয়ে ওঁর শেষকৃত্য হবে।”
উল্লেখ্য যে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কলকাতার ঢাকুরিয়াতে, ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন রেলের কর্মকর্তা, মা হেমপ্রভা দেবী। ছয় সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর পিতামহ একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং পরিবারটি ১৯১১ সাল থেকে ঢাকুরিয়াতে বসবাস করতেন। ১৯৭১ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ এবং ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গান দুটি হল – আমাদের ছুটি ছুটি এবং ওরে সকল সোনা মলিন হল। এছাড়াও ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। তবে, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।