দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ১৬ ফেব্রুয়ারি: দশদিনের ব্যবধানে সুরের আকাশে তৃতীয় নক্ষত্র পতন! চলে গেলেন ‘ডিস্কো কিং’ বাপ্পি লাহিড়ী (Bappi Lahiri)। মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ৬৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি! মঙ্গলবার রাত্রি ১১ টা নাগাদ জুহুর ওই বিখ্যাত হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। হাসপাতালের ডিরেক্টর ডাঃ দীপক নামজোশি (Dr Deepak Namjoshi) জানিয়েছেন, “বাপ্পি লাহিড়ী গত এক মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং সোমবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, মঙ্গলবার তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। তাঁর পরিবারের তরফে ডাক্তারকে তাদের বাড়িতে দেখার জন্য ডাকা হয়। এরপরেই তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। একাধিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ছিল তাঁর। মধ্যরাতের কিছু আগে ওএসএ (অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া) এর কারণে তিনি মারা যান।” উল্লেখ্য যে, গতবছর এপ্রিল মাসে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। করোনা-কে জয়ও করেছিলেন। তবে, তার পর থেকেই নানা অসুস্থতা ঘিরে ধরে তাঁকে!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পি লাহিড়ী। তাঁর মা-বাবা যথাক্রমে বাঁসুরি লাহিড়ি ও অপরেশ লাহিড়িও সঙ্গীত জগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমারও তাঁর আত্মীয় ছিলেন। তাই ছোট থেকেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও শ্যামা সঙ্গীতের পরিবেশে বড় হয়েছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই তবলা বাজানো শেখা শুরু করেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। ১৯ বছর বয়সে তিনি মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন, ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথম সঙ্গীত নির্দেশনা করেন। এরপরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করে টুইট করেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, “কিংবদন্তি গায়ক এবং সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী জি-র মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পেরে আমি বেদনাহত। তাঁর মৃত্যু ভারতীয় সঙ্গীত জগতে এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। বাপ্পি দা তার বহুমুখী গান এবং প্রাণবন্ত প্রকৃতির জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার পরিবার ও ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা। ওম শান্তি!” সুরকার জিৎ গাঙ্গুলি জানিয়েছেন, “সঙ্গীত জগতে পর পর নক্ষত্র পতন। কালকে সন্ধ্যা দি আজ বাপ্পি দা। বলার মতো কোনও ভাষা নেই। পরিবারের সদস্যকে হারালে যেরকম অনুভুতি হয় সেরকমই মনে হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন যে বাপ্পি লাহিড়ীর গানের ভাষায় বলতে গেলে তাঁকে কখনও ‘আলবিদা’ বলতে পারবেন না তিনি। তবে, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ‘সুর সম্রাজ্ঞী’ লতা মঙ্গেশকর (৬ ফেব্রুয়ারি), ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (১৫ ফেব্রুয়ারি) এবং বাপ্পি লাহিড়ী (১৫ ফেব্রুয়ারি)’র প্রয়াণে সঙ্গীতের আকাশে নেমে এলো এক প্রগাঢ় নিঃস্তব্ধতা! লতা আর সন্ধ্যা’কেই ‘ইয়াদ’ (তাঁর বিখ্যাত গান- ইয়াদ আ রাহা হে) করতে করতে যেন সুরলোকে পাড়ি দিলেন বাপ্পি দা-ও।